যুক্তরাজ্যের একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিকট হতে হাজার হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়। কিছু অকেজো ভিসা নথি বানিয়ে দিয়ে এই টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিসির তদন্তে জানা যায়, কিছু এজেন্ট গ্রুপ কেয়ার ওয়ার্কারদের কাস(CAS) লেটার দিতে ১৭,০০০ পাউন্ড করে দাবি করছে। কিন্তু এই অর্থ তারা অযথাই দাবি করছে বলে তদন্তে উঠে আসে। যেখানে নিয়মানুযায়ী কেয়ার ওয়ার্কার স্পন্সর লেটার বিনামূল্যে প্রদান করার কথা।
অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিজেদের স্টুডেন্ট ভিসা হতে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায় পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যথাযথ কাগজাদি প্রদর্শন করার ব্যর্থতার জন্য হোম অফিস কর্তৃক তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান হয়।
বিবিসি ১৭ জন পুরুষ এবং মহিলাদের সাথে কথা বলেছে যারা শিক্ষার্থী ভিসা থেকে কাজের ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করে হাজার হাজার পাউন্ড খুইয়েছে।
তিনজন শিক্ষার্থী তাদের কঠিন পরিশ্রম করে জমা করা ৩৮,০০০ পাউন্ড এজেন্টদের প্রদান করেছিল। ভারতীয় এই তিন শিক্ষার্থী ভারতে তাদের সম্পদ বিক্রি করে এজেন্টদের টাকা প্রদান করে কিন্তু সবকিছু খুইয়ে তারা এখন পথের ভিখারি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কেয়ার হোমস এবং কেয়ার সেক্টরের এজেন্সিগুলিতে ২০২২ সালে ১,৬৫,০০০টি শূন্যপদ ছিল বলে তথ্যমতে জানা যায়।
সরকার আন্তর্জাতিক প্রার্থীদের আবেদন করার অনুমতি দিয়ে অঘটন ঘটার পথকে প্রশস্ত করেছে বলে বিবিসি প্রতিবেদনে উঠে আসে। যার ফলে ভারত, নাইজেরিয়া এবং ফিলিপাইন, বাংলাদেশ হতে বিপুল পরিমাণ লোক আগ্রহ দেখায় যুক্তরাজ্যে আসার।
নিয়মানুযায়ী আবেদনকারীদের স্পনসর থাকতে হবে, যারা নিবন্ধিত কেয়ার হোম বা এজেন্সি। এবং সাধারণ নিয়মানুযায়ী চাকুরিজীবীদের তাদের স্পনসরশিপের জন্য কোনও পয়সা দিতে হবে না। তবে বাস্তবতায় ১৫,০০০ পাউন্ড বা এর উপরে অর্থ পরিশোধ করলেই স্পন্সরশিপের কাগজ প্রদান করতো অনেক কেয়ার হোম বা এজেন্সি।
২১ বছর বয়সী ভারতীয় শিক্ষার্থী নাদিয়ার সাথে আলোচনা করে জানা যায়, তিনি ২০২১ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে কোর্স সম্পন্ন করতে স্টাডি ভিসায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিলেন।
এক বছর পরে, তিনি ২২,০০০ পাউন্ড টিউশন ফি প্রদানের পরিবর্তে কেয়ার ভিসাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
একজন বন্ধু তাকে এজেন্টের নম্বর দেন যিনি নাদিয়াকে বলেছিলেন তিনি ১০,০০০ পাউন্ডের বিনিময়ে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার প্রয়োজনীয় স্পন্সরশিপের নথি সরবরাহ করতে পারবেন। পরবর্তীতে নাদিয়া অর্থ প্রদান করলে সেই এজেন্ট তাকে কিছু ভুয়া কাগজ হাতে ধরিয়ে দেয়।
নাদিয়া বলেন, ” আমি সরাসরি কেয়ার হোমকে ফোন করে আমার ভিসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তারা বলেছে স্পনসরশিপের কোনও কাগজ তারা সরবরাহ করে নাই কারণ তাদের কোনো শূন্যপদ নেই।”
কিন্তু এজেন্ট নাদিয়াকে বলেন সকল কাগজ ঐ কেয়ারহোম কোম্পানি দিয়েছে। এজেন্ট তাকে পুলিশের কাছে যাওয়ারও পরামর্শ দেন কিন্তু নাদিয়া ভয়ে আর কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই বলে বিবিসিকে জানান।
এই ব্যাপারে হোম অফিসের সাথে যোগাযোগ করা হলে
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, ” জালিয়াতি ভিসা অ্যাপ্লিকেশনগুলি সনাক্ত এবং প্রতিরোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে হোম অফিস। কোনো ব্যক্তি কেয়ারহোমের কাগজ বা CAS(কাস)লেটার নিলে তা যাচাই করা উচিত। এই কাগজ যদি সঠিক না হয় তাহলে ভিসা প্রদান করা হয় না।”
ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের ইমিগ্রেশনের প্রধান লুক পাইপার বলেছেন, “অনেক লোক জালিয়াতির শিকার হয়েছে কিন্তু তারা পুলিশের কাছে যায় না। কারণ তারা হোম অফিস এবং রিপোর্টিংয়ের পরিণতি দেখে আতঙ্কিত।”
মিঃ পাইপার যোগ করেছেন, ” আমরা সারা দেশের লোকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ঘটনা শুনছি। এই ধরনের জালিয়াতি বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঘটেছে। সরকার নিজে যদি ওয়াকিবহাল না থাকে ভিসা সিস্টেম নিয়ে অথবা জেগে ঘুমায় তাহলে বিপদে সাধারণ মানুষেরই পড়তে হবে”।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪