ইংলিশ চ্যানেলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিতে শরণার্থী কাউন্সিল যুক্তরাজ্যকে বিশেষ ভিসা চালু করার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৪ সালে ছোট নৌকায় চ্যানেল পার হতে গিয়ে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে ১০,০০০ শরণার্থী ভিসা চালু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শরণার্থী কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে, এই বিশেষ ভিসার প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন কোনো ব্যবস্থা না নিলে এই বছর মৃত্যুর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রতিবেদনটি ফরাসি ও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুর তথ্য আরও ভালোভাবে নথিভুক্ত করার আহ্বান জানায়, যেখানে সম্ভব হলে ভুক্তভোগীদের বয়স, লিঙ্গ এবং জাতীয়তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে উত্তর ফ্রান্সের উপকূল বরাবর অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম উন্নত করার সুপারিশও করা হয়েছে।
২০২৪ সালে অন্তত ৬৯ জন পুরুষ, নারী ও শিশু চ্যানেল পার হতে গিয়ে মারা যান, যা ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মোট ৫৯ মৃত্যুর চেয়ে বেশি। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উত্তর ফ্রান্সের উপকূলে যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে ফরাসি পুলিশের কড়া নজরদারির ফলে, যাত্রা আরও ঝুঁকিপূর্ণ, অগোছালো এবং জনাকীর্ণ হয়ে উঠেছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করছে এবং নৌকা ছিন্নভিন্ন করছে।
এ পরিস্থিতিতে অনেকেই পাচারকারীদের টাকা না দিয়ে নৌকায় ওঠার চেষ্টা করছেন। গত বছরের মৃত্যুর বেশিরভাগ ঘটনাই ফরাসি উপকূলের কাছাকাছি ঘটেছে।
শরণার্থী কাউন্সিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছে, যেখানে জো বাইডেনের প্রশাসন মেক্সিকো সীমান্তে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি ৫৩২,০০০ কিউবান, হাইতিয়ান, নিকারাগুয়ান এবং ভেনেজুয়েলান নাগরিককে আইনসঙ্গত উপায়ে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এই উদ্যোগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনিয়মিত প্রবেশের সংখ্যা মাসিক গড়ে ৫৪,০০০-এ নেমে আসে, যা ২০২২-২৩ সালে ছিল ২,০০,০০০।
শরণার্থী ভিসা প্রকল্পটি ইরিত্রিয়া, সুদান এবং আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, যেখানে শরণার্থীর অনুমোদন হার খুবই বেশি।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি ঘটনায় ছয় শিশু এবং একজন গর্ভবতী মহিলাসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৫। ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে চ্যানেল পার হওয়া একটি শিশু জানায়, তারা যাত্রাপথে আরেক শিশুকে পানিতে পড়ে মারা যেতে দেখেছে।
শরণার্থী কাউন্সিলের সিইও এনভার সলোমন বলেন, “২০২৪ সালে চ্যানেলে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করে বর্তমান পদ্ধতি কার্যকর নয়। পাচারকারী চক্র জীবন ঝুঁকিতে ফেলে লাভবান হচ্ছে, এবং শুধু কঠোর পদক্ষেপ এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
“আরও নিরাপদ ও আইনি পথ প্রয়োজন, যা যুদ্ধ ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের জন্য জীবনরক্ষাকারী হবে। সরকারকে একটি ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে যাতে ২০২৫ সালে গত বছরের মর্মান্তিক ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “সমুদ্রে হারানো প্রতিটি জীবন একটি ট্র্যাজেডি। আমাদের প্রচেষ্টা জীবন রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সীমান্ত রক্ষায় নিবদ্ধ।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৩ জানুয়ারি ২০২৫