11 C
London
October 29, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ অভিযানঃ এক বছরে গ্রেপ্তার বেড়েছে ৬৩ শতাংশ

রেকর্ড শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে কাজ করা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযান পরিচালনা করেছে ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট। “অপারেশন স্টারলিং”-এর আওতায় ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ১১ হাজারেরও বেশি অভিযান চালানো হয়েছে, যার ফলে ৮ হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটি ব্রিটিশ ইতিহাসে অবৈধ শ্রমবাজারে সবচেয়ে বড় দমন অভিযান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে গ্রেপ্তারের হার বেড়েছে ৬৩ শতাংশ এবং অভিযানের সংখ্যা বেড়েছে ৫১ শতাংশ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১,০৫০ জন বিদেশি নাগরিককে ইতিমধ্যে দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সরকার বলছে, এই অভিযান যুক্তরাজ্যের কালো অর্থনীতি (black economy) সংকুচিত করতে এবং অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যে আসার প্রণোদনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

‘অপারেশন স্টারলিং’-এর অংশ হিসেবে সরকার ৫০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল টেকঅ্যাওয়ে রেস্তোরাঁ, বিউটি স্যালন, কার ওয়াশ এবং ফাস্টফুড ডেলিভারি সেক্টরে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশিদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার, আটক ও ফেরত পাঠানো।

নতুন আইনে “রাইট টু ওয়ার্ক” যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হচ্ছে, যাতে শুধু প্রথাগত চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানই নয়, বরং গিগ ইকোনমি, ক্যাজুয়াল, অস্থায়ী ও সাবকন্ট্রাক্টেড কাজের ক্ষেত্রও আইনের আওতায় আসে। এখন থেকে কোনো নিয়োগকর্তা কর্মীর অভিবাসন অবস্থা যাচাই না করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, প্রতি অবৈধ কর্মীর জন্য ৬০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা এবং ব্যবসা বন্ধের শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, “অবৈধভাবে কাজ করা এই দেশে প্রবেশের প্রণোদনা তৈরি করে—এটা আর চলবে না। বিউটি স্যালন, কার ওয়াশ বা ডেলিভারি কাজে অবৈধভাবে নিযুক্তদের গ্রেপ্তার, আটক ও ফেরত পাঠানো হবে। আমি যুক্তরাজ্যের সীমান্ত সুরক্ষায় যা কিছু করা প্রয়োজন, তাই করব।”

সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী সংসদীয় মেয়াদের শেষ নাগাদ ডিজিটাল আইডি বাধ্যতামূলক করা হবে, যা কাজের অধিকার প্রমাণের একমাত্র সরকারি উপায় হিসেবে গৃহীত হবে। ডিজিটাল আইডির মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, জাল কাগজপত্র প্রতিরোধ করা এবং অবৈধ কর্মসংস্থান রোধ করাই সরকারের লক্ষ্য।

সরকার বলছে, এই ডিজিটাল ব্যবস্থা অবৈধ অভিবাসীদের কাজ পাওয়া কঠিন করবে এবং যারা নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের নিয়োগ দেয়, সেইসব অসাধু ব্যবসায়ীও দ্রুত সনাক্ত হবে। এটি হবে যুক্তরাজ্যে কাজের অধিকার যাচাইয়ের সহজ ও একীভূত পদ্ধতি।

এদিকে সরকার ৬ সপ্তাহের পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করছে, যাতে নতুন “রাইট টু ওয়ার্ক” নিয়ম বাস্তবায়নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে কখন ও কীভাবে কর্মীর অভিবাসন যাচাই সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়া, ডেলিভারু, জাস্ট ইট ও উবার ইটসের মতো খাবার সরবরাহ প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সরকার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই আইডি যাচাই প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করেছে। হোম অফিস তাদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় চুক্তিও করেছে, যাতে আশ্রয়প্রার্থীরা অবৈধভাবে ডেলিভারি ড্রাইভার হিসেবে কাজ না করতে পারে।

সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপগুলো একদিকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, অন্যদিকে ছোট নৌকায় করে অভিবাসী পাঠানো পাচারকারী চক্রের ব্যবসায়িক মডেলও ভেঙে দেবে। এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং এই সরকারের অধীনে প্রত্যাবাসনের হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

সূত্রঃ ইউকে ডট গভ

এম.কে

আরো পড়ুন

ডিঙ্গি নয়, দৃষ্টিভঙ্গির বদল দরকারঃ ব্রিটেন-ফ্রান্স উদ্যোগ নিয়ে সংশয় জাতিসংঘের

এবারের বাজেটে যা ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন ঋষি সুনাক

যুক্তরাজ্যে বঞ্চিত এলাকায় ডাক্তার সংকট, চরম ঝুঁকিতে স্বাস্থ্যসেবা