প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪০৩ দিনে যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পৌঁছেছে। ক্ষমতায় এসে তিনি রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল, “স্টপ দ্য বোটস” স্লোগান পরিত্যাগ এবং সেই অর্থ পাচারকারী গ্যাং ধ্বংসে ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিপজ্জনক সমুদ্রপথে আগমন অব্যাহত রয়েছে এবং পাচারকারীরা এখনো অর্থ উপার্জন করছে। এদিকে, আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখার বিরোধিতায় রিফর্ম ইউকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্ভিক্ষ, দমনমূলক শাসন ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যের পথে পা বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালে আগতদের প্রায় অর্ধেক এসেছে আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরান থেকে। এদের মধ্যে অনেকে যুদ্ধ, খাদ্যসংকট এবং নারী ও সংখ্যালঘু দমনের শিকার। এরিত্রিয়া থেকেও আগমন বেড়েছে, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও খরা-জনিত দুর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ হুমকির মুখে। যদিও চ্যানেল ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে—গত বছর এখানে রেকর্ড ৮২ জন প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১৪ জন শিশু।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও পারিবারিক সম্পর্ক অনেককে এই দেশকে গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। আফ্রিকা ও এশিয়ার বহু দেশে ইংরেজি সরকারি ভাষা হওয়ায় যুক্তরাজ্যে খাপ খাওয়ানো তুলনামূলক সহজ। তাছাড়া সংখ্যালঘুদের জন্য যুক্তরাজ্য ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় নিরাপদ ও সহনশীল বলে একটি ধারণা রয়েছে।
নিরাপদ ও বৈধ রুটের অভাবে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রায় সবাইকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছে আবেদন করতে হয়। সীমিত কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া নিজ দেশ থেকে আবেদন করা যায় না। শরণার্থী সহায়তা সংস্থাগুলো নতুন নিরাপদ রুট চালুর আহ্বান জানালেও ধারাবাহিকভাবে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করছে, কারণ এতে অভিবাসনের চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা। ফলে পাচারকারীদের চালিত অতিরিক্ত ভিড়ের নৌকাই অনেকের শেষ ভরসা।
ট্রাক বা ইউরোস্টার দিয়ে গোপনে প্রবেশের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন নৌকায় ভরসা করছেন। ২০১৪ সালের পর ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকার বন্দর ও ইউরোটানেলে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে, যার মধ্যে রয়েছে বাড়তি সিসিটিভি, প্রাচীর, থার্মাল ইমেজিং ও হার্টবিট মনিটর। এর ফলে নৌকা পাচারকারী গ্যাংগুলো আরও সক্রিয় ও সংগঠিত হয়েছে। যাত্রার খরচ ২০১৮ সালের প্রায় ১৪ হাজার ইউরো থেকে ২০২৪ সালে ৪ হাজার ইউরোর নিচে নেমে এসেছে, আর প্রতিটি নৌকায় যাত্রী বেড়ে ৬০ জনেরও বেশি হয়েছে।
স্টারমারের ঘোষিত পরিকল্পনার প্রভাব এখনো কার্যকরভাবে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ঘোষিত ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ নীতি অনুযায়ী, চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো প্রতিটি ব্যক্তির বদলে নিরাপদ রুটে একজন আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাজ্যে আনা হবে। এছাড়া পাচারকারীদের সম্পদ জব্দ, তদন্তকারী বাড়ানো এবং পাচারকারী গ্যাং ধ্বংসে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সীমান্ত নিরাপত্তা, আশ্রয় ও অভিবাসন বিল এখনো সংসদে পাস হয়নি।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১২ আগস্ট ২০২৫