স্থানীয় নির্বাচনে রিফর্ম পার্টির কাছে একাধিক পরাজয়ের পর যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনা করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে লেবার সরকার। অভিবাসন সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর অভিবাসন সংখ্যা কমাতে “হোয়াইট পেপারে” নীতিমালা প্রস্তুত করছে মন্ত্রিসভা।
গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত হতে যাওয়া একটি অভিবাসন সংক্রান্ত হোয়াইট পেপার প্রস্তাব থাকছে, যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আশ্রয় আবেদন চাওয়া ও তা কমানোর উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।
সরকার চলতি মাসেই এই প্রস্তাবগুলোর খসড়া চূড়ান্ত করছে যাতে করে যুক্তরাজ্যে বৈধ অভিবাসন হ্রাস করা যায় এবং ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হয়।
হোম অফিসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়া ১,০৮,০০০ জনের মধ্যে ১৬,০০০ জন ছিলেন ছাত্র ভিসাধারী।
হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেছেন, এই সংখ্যাগুলো প্রমাণ করে অনেকে ভিসা পাওয়ার সময় আর্থিকভাবে স্বনির্ভর থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও, ভিসার মেয়াদ শেষে এসে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করছেন— যা স্পষ্ট অপব্যবহার।
হোম অফিসের সূত্র বলছে, এই অভিবাসন নীতিগুলো বহু মাস ধরেই পরিকল্পনার মধ্যে ছিল, তাছাড়া এটা রিফর্ম পার্টির স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেয়া হচ্ছে না। লেবার পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বৈধ অভিবাসন কমানোর অঙ্গীকার করেছিল আগেই।
ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের লেবার এমপিরা গোপনে আরও কঠোর অভিবাসন নীতির আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ বৃহস্পতিবারের স্থানীয় নির্বাচনে রিফর্ম পার্টি বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রিফর্ম পার্টি রানকর্ন ও হেলসবির উপনির্বাচন, গ্রেটার লিংকনশায়ার মেয়র পদের নির্বাচন, ৬০০-এর বেশি কাউন্সিল আসনে জয়লাভ করেছে।
বাসেটল-এর এমপি ও লেবার এমপিদের ‘রেড ওয়াল’ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জো হোয়াইট বলেন, সরকারকে “লুকোচুরি বন্ধ করে” ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করা উচিত।
রবিবার টেলিগ্রাফে লেখা এক নিবন্ধে তিনি অভিবাসন কমাতে ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালুর দাবি জানান এবং আঞ্চলিক শিশু নিপীড়ন তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি বয়স্কদের জন্য শীতকালীন জ্বালানি ভাতা কমানোর সমালোচনাও করেন।
অন্য লেবার এমপিরা যুক্তি দেন, সরকারকে আরও বামঘেঁষা নীতিতে ফিরে যেতে হবে এবং প্রতিবন্ধী সুবিধা হ্রাসসহ জনসেবা কাটছাঁট লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা হ্রাস করছে।
ইয়র্ক সেন্ট্রালের এমপি র্যাচেল মাসকেল বলেন, লেবার পার্টির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত “মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা”। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলাম সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য, যাতে তারা কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পক্ষে কণ্ঠ তুলে ধরতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মনে করি, যখন লেবার পার্টি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ অন্য কোথাও সাহায্য খুঁজতে শুরু করে।”
কিয়ার স্টারমার টাইমসে এক নিবন্ধে লিখেছেন, তিনি নির্বাচনী ফলাফলকে “পুরনো অজুহাত” দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন না। তিনি লেখেন, “আমি বুঝি। অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন, নদীতে ময়লা, ভেঙে পড়া স্থানীয় সেবা— দেশের এমন করুণ অবস্থায় আমারও মানুষজনের মতোই ক্ষোভ হয়।”
স্টারমারকে সতর্ক করে লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি বলেন, রিফর্ম পার্টিকে খুশি করার জন্য নীতি নির্ধারণ বা ঠিক করা ভুল হবে।
তিনি বলেন, “লেবার সরকারকে নাইজেল ফারাজের সঙ্গে সরাসরি লড়তে হবে, তার বিভাজনের রাজনীতিতে সাড়া না দিয়ে।”
তিনি আরও বলেন, “কানাডায় মার্ক কার্নি যেমন ট্রাম্পের বিরুদ্ধাচরণ করে জনমত ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি আমাদেরও নিজের নীতিতে অবিচল থাকতে হবে। এই সপ্তাহের নির্বাচনে আমরাই একমাত্র দল যারা রিফর্ম পার্টিকে প্রতিহত করতে পেরেছি— আমাদের স্থানীয় মূল্যবোধ ও জনগণকেন্দ্রিক রাজনীতির মাধ্যমে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ মে ২০২৫