TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের আপিলের সংখ্যা দুই বছরে প্রায় ৫০০% বৃদ্ধি পেয়েছে

যুক্তরাজ্যের রিফিউজি কাউন্সিলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীরা প্রত্যাখ্যাত আবেদনগুলোর বিরুদ্ধে আপিল করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অনেক অভিবাসী অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে পড়ছে। আদালতে আটকে পড়া এই মামলার সংখ্যা গত দুই বছরে প্রায় ৫০০% বেড়েছে বলে জানা যায়। যা করদাতাদের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানায় যুক্তরাজ্য রিফিউজি কাউন্সিল।

ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে ট্রাইব্যুনাল আদালতগুলোর ব্যাকলগে ৪১,৯৮৭টি আশ্রয় আপিল প্যান্ডিং ছিল। যেখানে ২০২৩ সালের শুরুতে মামলার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭,১৩৩টি।

২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে ১২,১৮৩টি নতুন আপিল দায়ের করা হয়েছে, যা লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশ্রয় প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তের ফলে হয়েছে বলে জানা যায়।

২০২৪ সালে প্রথম-টিয়ার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা আশ্রয় আপিলের সংখ্যা বছরওয়ারি ভিত্তিতে ৭১% বৃদ্ধি পেয়েছে।

এটি আশ্রয় প্রত্যাখ্যানের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ ২০২৪ সালে আশ্রয়প্রার্থীদের এসাইলাম কেইস গ্র‍্যান্টের হার ৪৭%-এ নেমে এসেছে। রিফিউজি কাউন্সিলের মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্রয় প্রক্রিয়ার ব্যাকলগ দূর করতে নতুন কেসওয়ার্কার নিয়োগ ও প্রাথমিক সাক্ষাৎকার সংক্ষিপ্ত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ভুল এবং তথ্যের ঘাটতি বৃদ্ধি করেছে।

রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেছেন, প্রথমবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যাতে সিস্টেমের অন্য কোনো অংশে নতুন ব্যাকলগ তৈরি না হয়।

তিনি বলেন, “যথাযথভাবে আশ্রয় মামলাগুলোর সমাধান করা হলে ব্যয় হ্রাস পাবে এবং যারা অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে আছে, যেমন হোটেলে বসবাসরত ও কাজ করতে না পারা মানুষ, তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে। দেশের বিভিন্ন কমিউনিটিতে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেল ব্যবহারের বিষয়টি সরকারের ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং এটি সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। চলতি বছরের শেষের মধ্যে এই হোটেল ব্যবহারের অবসান ঘটানোর জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।”

২০২৪ সালের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত হোটেলগুলোতে ৩৮,০৭৯ জনকে রাখা হয়েছিল। সরকারি পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী এই তথ্য জানা যায়। রিফিউজি কাউন্সিলের অনুমান অনুযায়ী, এই সংখ্যা ২০২৫ জুড়ে একই থাকলে বার্ষিক ব্যয় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছাতে পারে।

আশ্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা দাবি করেছেন, ঋশি সুনাকের সময় চালু করা নিয়মের ফলে আশ্রয় আপিলের সংখ্যা বেড়েছে।

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৯০,০০০টি আশ্রয় দাবি নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণকাল সংক্ষিপ্ত করেন এবং কেসওয়ার্কারদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য মাত্র দুই ঘণ্টার সময়সীমা নির্ধারণ করেন।

এছাড়া, ২০২২ সালে কনজারভেটিভ সরকারের চালু করা Nationality and Borders Act-এর কারণে শরণার্থী মর্যাদা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণের মানদণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে।

অভিবাসন আইনজীবীদের ঘাটতির কারণে আশ্রয় আপিলের দীর্ঘসূত্রিতা আরও বেড়েছে। এর ফলে অনেক মামলা মুলতবি রাখা হয়েছে, এবং অনেকে নিজেদের হয়ে আপিল পরিচালনা করছেন। যা সাধারণত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে পরিচালিত শুনানির তুলনায় ছয় গুণ বেশি সময় নেয়।

ইভেট কুপারের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক আশ্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংখ্যা আগের তিন মাসের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয় নতুন প্রায় ১,০০০ বিচারক ও ট্রাইব্যুনাল সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। লর্ড চ্যান্সেলর শাবানা মাহমুদ ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে অভিবাসন খাতে কর্মরতদের জন্য সিভিল লিগ্যাল এইডের হার অন্তত ১০% বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছেন।

একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, “আশ্রয় দাবি প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথকভাবে বিবেচনা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা পূর্ববর্তী সরকারের নিকট হতে যে আশ্রয় ব্যবস্থা পেয়েছি, তা যথাযথভাবে কাজ করছিল না। তাই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি প্রক্রিয়াটি পুনরায় চালু করতে এবং মামলার ব্যাকলগ কমাতে। যা আগামী দুই বছরে করদাতাদের আনুমানিক ৪ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করবে। আমরা পর্যায়ক্রমে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেল ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যাতে আশ্রয় আবাসনের অতিরিক্ত ব্যয় কমানো যায়।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৭ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় পশ্চিম বলকান সম্মেলনের আয়োজক যুক্তরাজ্য

টিউলিপ সিদ্দিকীর রাজনীতির হাতেখড়ি এক স্বৈরশাসকের হাতে

চাপে টিউলিপ সিদ্দিক, জানালেন যা