TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নীতিতে বড় পরিবর্তনঃ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতার বেদনাময় গল্প

যুক্তরাজ্যের নতুন কঠোর আশ্রয় নীতির কারণে পরিবারবিচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন বহু শরণার্থী। ইয়র্কশায়ারে বসবাসরত ৩৫ বছর বয়সী জিম্বাবুয়েন আশ্রয়প্রার্থী কিম তাদেরই একজন। নয় বছর ধরে নিজের ছেলের মুখ না দেখা এই মা জানেন না, তিনি আদৌ কবে তার সন্তানের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে পারবেন।

 

সরকার সম্প্রতি যে নীতিপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে শরণার্থীদের পরিবারের স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাজ্যে যোগদানের পথ বাতিল করা হয়েছে। পূর্বে আশ্রয় আবেদন গ্রহণ হলে পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আসা তুলনামূলক সহজ ছিল; এখন ওই অধিকার সরাসরি আর নেই। শরণার্থী মর্যাদা পেলেও তাদের ‘প্রোটেকশন ওয়ার্ক অ্যান্ড স্টাডি ভিসা’তে যেতে হবে, এবং যোগ্যতা অর্জন করে পরে পরিবারের সদস্যদের স্পনসর করতে পারবেন। তবে £২৯,০০০ বার্ষিক আয়ের শর্ত তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না—এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি সরকার।

এ অবস্থায় কিমের মতো অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তায়। নার্সিং প্রশিক্ষণের প্রস্তুতিতে থাকা কিম বলেন, এমনকি তার আশ্রয় আবেদন অনুমোদিত হলেও প্রয়োজনীয় আয় অর্জনে অন্তত চার বছর লাগবে। তার ছেলে বর্তমানে ১৩ বছর বয়সী; ছেলের বয়স ছিল মাত্র চার, যখন তিনি তাকে শেষবার দেখেছিলেন। “আমি তাকে ফোনে শেখাতে চাই, তাকে ভালোবাসা দিতে চাই, কিন্তু দূরত্বটা দিন দিন বাড়ছে,” বলেন কিম।

জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রতিবাদে কিম যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালেই নিজ দেশের সরকারের নজরে পড়েন। দেশে ফেরা তার জন্য নিরাপদ ছিল না। তিনি আশা করেছিলেন দ্রুতই ছেলেকে যুক্তরাজ্যে আনতে পারবেন। কিন্তু হোম অফিসের নিয়ম অনুযায়ী, আশ্রয় মামলার সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরতে বা সন্তানকে আনতে সক্ষম নন।

সরকারের নীতিপত্রে আরও বলা হয়েছে, শরণার্থীদের থাকার অনুমতি কমিয়ে আড়াই বছর করা হবে এবং স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। মানবাধিকার সনদের (ECHR) পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের অধিকার সম্পর্কিত ধারা ৮–এর প্রয়োগও কঠোর করা হবে—যা পরিবার পুনর্মিলনের পথ আরও সংকুচিত করবে।

অভিবাসী অধিকারকর্মীরা বলছেন, লেবার সরকারের এই পদক্ষেপ শরণার্থীদের মানবিক সংকটকে আরও প্রকট করবে। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রান্ট ফোরামের নিক বিলসের ভাষায়, “পরিবার পুনর্মিলন স্থগিত ছিল প্রথম ধাপ; আশ্রয় অধিকারের ওপর যে আঘাত আসছে তার মানবিক মূল্য ভয়াবহ।”

হোম অফিস বলছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ কমাতেই পরিবার পুনর্মিলনের পথ স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা দাবি করছে, নির্দিষ্ট কিছু বিকল্প রুট এখনও খোলা আছে, যেগুলোর মাধ্যমে কিছু পরিবার পুনর্মিলনের চেষ্টা করতে পারে।

এদিকে কিমের মতো হাজারো পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। “আমি শুধু আমার সন্তানকে দেখতে চাই,” বলেন তিনি। “মানুষ হিসেবে আমাদের একে অন্যকে সাহায্য করা উচিত। কিন্তু আমি জানি না কবে আমার সন্তানকে জড়িয়ে ধরতে পারব।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে হাসপাতালের রেকর্ড রুমে পানিতে ভিজে কয়েক’শো রুগীর নথিপত্র নষ্ট

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ‘র সভাপতির গণসংবর্ধনা

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে গর্ভবতী মাকে ছত্রাক আক্রান্ত ফ্ল্যাটে থাকতে বাধ্য করেছে স্থানীয় কাউন্সিল