যুক্তরাজ্যের হ্যার্টফোর্ডশায়ারে আয়োজিত একটি ইসলামিক সামার ক্যাম্প নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আইন ও নিরাপত্তা সংস্থা। ‘ক্যাম্প উইলায়াহ’ নামের চার দিনব্যাপী এই ক্যাম্পটি আয়োজন করছে লন্ডনভিত্তিক অহলুল বায়াত ইসলামিক মিশন (AIM), যাদের বিরুদ্ধে ইরানি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আদর্শিক সংশ্লিষ্টতা এবং উগ্রপন্থী প্রচারণার অভিযোগ রয়েছে।
৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নির্ধারিত এই ক্যাম্পে থাকবে পাহাড়ে ওঠা, অ্যাবসেইলিং, ইসলামিক আলোচনা ও দলগত কার্যক্রম। মেয়েদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক এবং ছেলে-মেয়ে আলাদা রাখার নিয়ম চালু থাকবে। তবে AIM-এর পূর্ববর্তী কার্যক্রম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যেখানে দেখা যায় শিশুরা ফিলিস্তিনি পতাকা, তরমুজের প্রতীক আঁকছে ও ঘুড়ি বানাচ্ছে—যা অনেকের মতে ৭ অক্টোবর হামলার সময় হামাসের ব্যবহৃত প্যারাগ্লাইডারকে নির্দেশ করে।
আইনজীবী সংগঠন UK Lawyers for Israel (UKLFI) অভিযোগ করেছে, এই কার্যক্রম শিশুদের জাতীয়তাবাদী প্রতিরোধের সঙ্গে প্রতীকীভাবে যুক্ত করছে, যা ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে চরমপন্থী আদর্শ গেঁথে দিতে পারে। সংগঠনটি ব্রেন্ট ও হ্যার্টফোর্ডশায়ার কাউন্সিলকে চিঠি দিয়ে ক্যাম্প বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
AIM অতীতে সামাজিক মাধ্যমে হামাসের সহিংসতা ন্যায়সঙ্গত বলে প্রচার করেছে এবং আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রশংসা করে বারবার পোস্ট দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর এক পোস্টে তারা ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে লিখেছিল, “জায়নিস্টরা নিজেরাই এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।”
সংগঠনটি পরিচালিত ভিডিওতে ইহুদি জনগোষ্ঠীকে “দখলদার”, “সহিংস” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং ইসরায়েলকে শিশু হত্যার রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি যারা ইসরায়েলের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণ করে, তাদের ‘নোংরা’ বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে আখ্যা দিয়েছেন সরকারের সাবেক উগ্রপন্থা-বিষয়ক উপদেষ্টা লর্ড ওয়ালনি। তিনি বলেছেন, “বাচ্চাদের এসব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া মানে ইরানি ধর্মতন্ত্রের প্রভাবকে যুক্তরাজ্যে আমন্ত্রণ জানানো।” ছায়া বিচারমন্ত্রী রবার্ট জেনরিকও মত দিয়েছেন, এ ধরনের ইরানপন্থী সংগঠনের পরিচালিত ক্যাম্পে শিশুদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা উচিত।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কমিটির (ISC) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান এখন দেশটির জন্য রাশিয়ার মতোই বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠেছে।
ক্যাম্প উইলায়াহ প্রতি বছরই AIM পরিচালনা করে আসছে এবং ২০১৭ সালের এক ছবিতে এই ক্যাম্পে অংশ নিতে দেখা গেছে সংস্থার ঘনিষ্ঠ এক ধর্মীয় নেতাকে, যিনি ইউরোপে ইহুদি নিপীড়নকে ‘যথাযথ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ব্রেন্ট কাউন্সিল জানায়, তারা এই ক্যাম্প ও AIM-এর কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। হ্যার্টফোর্ডশায়ার কাউন্সিলও জানিয়েছে, তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তবে AIM পূর্ববর্তী বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো বিদেশি শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তারা লেভান্ট অঞ্চলের জনগণের ওপর পরিচালিত ‘জায়নিস্ট নিপীড়নের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার।
বর্তমানে ক্যাম্পটি বাতিলের দাবিতে চাপ বাড়ছে এবং পরিস্থিতি ঘিরে জাতীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা ও মতাদর্শগত উদ্বেগ তীব্র হয়ে উঠেছে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
১৩ জুলাই ২০২৫