TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে এমপিদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভে ছয় মাস জেলঃ নতুন আইনে প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক

ব্রিটেনে এমপিদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করা এখন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ বাড়ায় যুক্তরাজ্য সরকার নতুন আইনি সংশোধনী আনছে, যার ফলে এমন প্রতিবাদে জড়িতদের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

সরকার মঙ্গলবার অপরাধ ও পুলিশিং বিলের (Crime and Policing Bill) সংশোধনী আনবে, যাতে এমপি, লর্ড, কাউন্সিলরসহ যেকোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হবে। এই পদক্ষেপে সরকারের বিরুদ্ধে আবারও ‘প্রতিবাদের অধিকার সংকোচনের’ অভিযোগ উঠেছে।

হোম অফিসের এক সূত্র জানিয়েছে, নতুন আইন অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধির বাড়ির সামনে প্রতিবাদ করা হলে— যার উদ্দেশ্য তাকে তার রাজনৈতিক দায়িত্ব বা ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাবিত করা— সেটি একটি ফৌজদারি অপরাধ হবে। সরকার এ আচরণকে “যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বিষাক্ত প্রবণতা” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

হাউস অব কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৬ শতাংশ এমপি অন্তত একবার হলেও হয়রানি বা ভয়ভীতির মুখোমুখি হয়েছেন। নিরাপত্তা মন্ত্রী ড্যান জারভিস বলেছেন, “রাজনীতিবিদদের ওপর হামলা ও হুমকির মাত্রা ভয়াবহ। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। মানুষ যেন রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে নিজেদের বা পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে।”

জারভিস আরও বলেন, “জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ করা মানে সীমা অতিক্রম করা— এটি প্রতিবাদ নয়, এটি ভয় দেখানো। আমরা সেটি বন্ধ করতে যাচ্ছি।”

এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে জো কক্স ফাউন্ডেশন, যা নিহত লেবার এমপি জো কক্সের নামে প্রতিষ্ঠিত। সংস্থাটি বলেছে, “প্রতিবাদ ও তর্ক-বিতর্ক গণতন্ত্রের জন্য জরুরি, কিন্তু কারও বাড়ির সামনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা তার অংশ হতে পারে না।”

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের প্রতিবাদের অধিকারকে সীমিত করার আরেকটি উদাহরণ। জলবায়ু আন্দোলনকারী সংগঠন Just Stop Oil এবং Youth Demand—এর মতো দলগুলো অতীতে এমপিদের বাড়ির সামনে প্রতিবাদ করেছে, বিশেষ করে গাজা ইস্যুতে কিয়ার স্টারমার ও রিশি সুনাকের বাড়ির সামনে।

এই প্রতিবাদে জড়িত কয়েকজনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয় Criminal Justice and Police Act 2001–এর অধীনে। তবে নতুন সংশোধনীর ফলে পুলিশের ক্ষমতা আরও বাড়বে এবং আইন প্রয়োগে স্পষ্টতা আসবে বলে জানানো হয়েছে।

সাবেক কনজারভেটিভ এমপি মাইক ফ্রিয়ার বারবার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর পদত্যাগ করেছিলেন। লেবার এমপি স্টেলা ক্রিসিও তার বাসভবনের সামনে গর্ভপাতবিরোধী কর্মীদের প্রতিবাদের শিকার হন।

অন্যদিকে, ইয়ুথ ডিমান্ড সম্প্রতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির বাড়ির সামনে “লাশের ব্যাগ” রেখে প্রতিবাদ করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, “সরকার ইসরায়েলকে শিশু হত্যা করতে দিচ্ছে।”

তবে নতুন সংশোধনী সরকারি বাসভবন— যেমন ডাউনিং স্ট্রিট, চেকার্স বা ডর্নিওউড—এর সামনে প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করছে না। ফলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাসনগুলোর সামনে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া যাবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ম্যানর পার্কের সন্দেহভাজন হত্যাকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

ইসরায়েলে ঢুকতে দেওয়া হলো না দুই ব্রিটিশ এমপিকে

লিজ ট্রাসের সামনে যতো চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক