যুক্তরাজ্য সরকার অর্থনৈতিক দৈন্যতার মুখোমুখি এবং এই মূহুর্তে এসাইলাম প্রার্থীদের সমস্যা সরকারের জন্য বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বাজেটে বড় অংকের অর্থ বের হয়ে যাচ্ছে সরকারের যা নিয়ে জনমনে অসন্তোষও রয়েছে।
বৃটিশ গণমাধ্যমের এক খবরে জানা যায়, যুক্তরাজ্য সরকার হতে প্রাইভেট সেক্টরের বেসরকারী সংস্থাগুলি এসাইলাম প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পাউন্ড আয় করে নিচ্ছে।
বৃটিশ গণমাধ্যমের খবরে আরো জানা যায়, ৩৯৫ টি হোটেল আশ্রয়প্রার্থীদের বাড়ি হিসেবে বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে।
হোম অফিসের দেওয়া তথ্যমতে একটি বুকিং এজেন্সি তার প্রাক-করের মুনাফা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ মাসের মধ্যে ২.১ মিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই আয়ের মূল উৎস আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা।
হোম অফিস বলছে এই মূহুর্তে আশ্রয়প্রার্থীদের বসবাসের ব্যবস্থাটি নানারকম ঝামেলার মধ্য দিয়ে আগাচ্ছে।
সরকার কর্তৃক ব্যবহৃত হোটেলগুলির সংখ্যা ৩৯৫ টি। যার মধ্যে ৩৬৩ টি ইংল্যান্ডে, ২০ টি নর্থার্ন আয়ারল্যান্ডে, স্কটল্যান্ডে ১০ টি এবং ওয়েলসে দুটি। এতে দেখা যায় ইংল্যান্ড ও নর্থার্ন আয়ারল্যান্ডে
হোটেলের সংখ্যা অনেক বেশি স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের চেয়ে। যদিও জনসংখ্যার তারতম্যে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস খুব বেশি পিছিয়ে নয়।
হোম অফিসের তথ্য অনুসারে, ইংল্যান্ডে আশ্রয় দাবি করা লোকের সংখ্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় ইংল্যান্ডে হোটেলের পরিমান বেশি।
২০০২ সালে ইংল্যান্ডে আশ্রয় অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা ৮৪,১৩২ এ পৌঁছেছিল তবে ২০১০ সালের দিকে সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পায়। এখনও প্রায় ১৬৬০০০ লোকের এসাইলাম আবেদনের কোনো নিষ্পত্তি হয় নাই।
আশ্রয়প্রার্থীদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত আবাসনের অভাবের কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলগুলিতে রাখা হয়। যা প্রায়শই কয়েক দিনের নোটিশ দিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক গ্রহণ করা হয়। বৃটিশ গণমাধ্যমের খবরে জানা যায় অনেক সময় খুব অল্প সময়ে হোটেলগুলিকে বিদ্যমান বুকিং বাতিল করিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে আউটসোর্স করা সংস্থাগুলির হাতে হস্তান্তর করার জন্য যোগাযোগ করা হয় এসাইলাম প্রার্থীদের বসবাসের জন্য। তিনটি বড় সংস্থার হোটেল চালানোর চুক্তি রয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকারের সাথে।
সেরকো ইংল্যান্ডে প্রায় ১০৯ টি হোটেল নিয়ন্ত্রণ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে। এদের বেশিরভাগই মিডল্যান্ডস, পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম লন্ডনে।
একটি নথিতে প্রকাশিত হয়েছে, মিয়ারস গ্রুপ উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৮০ টি হোটেল চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, সংস্থাটি ২০২১ সালে তার বার্ষিক আয় ২২% বৃদ্ধি করতে পেরেছে।
হোম অফিস ব্যয়ের রেকর্ডগুলি দেখায় যে একটি ছোট ফার্ম, ক্যাল্ডার কনফারেন্সস, ২০২১ সালে হোম অফিস থেকে হোটেল বুক করার জন্য ২০.৬ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট পেয়েছিল। ২০২২ সালে এই চিত্রটি দাঁড়ায় ৯৭ মিলিয়নে।
যুক্তরাজ্যের সরকারী সূত্রগুলি অভিযোগ করেছে যে স্কটল্যান্ডের সরকার দেশে আশ্রয় প্রার্থীদের বসবাসের জন্য হোটেল বুকিং করার সিস্টেম সক্রিয়ভাবে ব্লক করেছে। তবে স্কটিশ সরকার একটি বিবৃতিতে বলেছে আশ্রয় ব্যবস্থাটি যথাযথ সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত নয় বলে তারা এই ব্যবস্থা এই মূহুর্তে বন্ধ রেখেছে তবে এসাইলাম প্রার্থীদের ব্যাকলগটি ছিল “যুক্তরাজ্য সরকারের নিজস্ব তৈরি”।
নিরাপত্তারক্ষীরা প্রায়শই সাংবাদিকদের আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে যেতে বাঁধা সৃষ্টি করে বলে বৃটিশ গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। একজন কর্মকর্তা জানান, আশ্রয়প্রার্থীদের “হয়রানি, হুমকি এবং শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি” হতে পারে বিধায় সতর্কতা হিসেবে তারা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, সরকার “হোটেল ব্যবহার হ্রাস করতে এবং করদাতার উপর বোঝা সীমাবদ্ধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার খরচ কমিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং অবৈধভাবে এইদেশে প্রবেশ রোধে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে “।