TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে কারাগারের ভয়াবহ ভুলে মুক্ত কেবাতু আবার হেফাজতে, জনরোষে চাপে লেবার সরকার

ভুলবশত মুক্তি পাওয়া এক দণ্ডপ্রাপ্ত যৌন অপরাধীকে ফের আটক করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। ইথিওপীয় নাগরিক হাজুশ গারবারস্লাসি কেবাতু (৪১), যিনি গত সেপ্টেম্বরে যৌন নিপীড়নের দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন, তাকে লন্ডনের ফিন্সবারি পার্ক এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মুক্তি নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

কেবাতু ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী ও এক নারীকে যৌন নির্যাতনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং আদালত তার বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের যৌন ক্ষতি প্রতিরোধ আদেশ (Sexual Harm Prevention Order) জারি করে। তবুও গত শুক্রবার এসেক্সের এইচএমপি চেল্মসফোর্ড কারাগার থেকে ভুলবশত তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির সময় তার পরনে ছিল কারাগারের ধূসর ট্র্যাকস্যুট, হাতে ছিল একটি প্লাস্টিক ব্যাগ।

মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, মুক্তির পর কেবাতু চেল্মসফোর্ড থেকে ট্রেনে স্ট্রাটফোর্ডে পৌঁছান এবং পরে ডালস্টনে দেখা যায় তাকে অ্যাভোকাডোর ছবি দেওয়া একটি ব্যাগ হাতে। অবশেষে রবিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ফিন্সবারি পার্কে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “এমন ভুল আর হতে দেওয়া যায় না। কীভাবে এটি ঘটল তা জানার জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, মুক্তির প্রক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, “কেবাতুকে যত দ্রুত সম্ভব বহিষ্কার করা হবে।”

কেবাতুর ভুল মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব ওয়েস স্ট্রিটিং একে “ভয়াবহ ব্যর্থতা” বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে ছায়া স্বরাষ্ট্র সচিব ক্রিস ফিলপ অভিযোগ করেন, “এই অদক্ষ লেবার সরকারই এমন অপরাধীকে মুক্ত করে দিয়েছে। এর দায় ল্যামি ও মাহমুদের।”
রিফর্ম ইউকের নীতি প্রধান জিয়া ইউসুফ বলেন, “এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেন ব্রিটেন এক ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত হয়েছে। এটি ভুক্তভোগীদের প্রতি চরম অবিচার।”

স্কাই নিউজের সাক্ষাৎকারে এক ডেলিভারি চালক জানান, মুক্তির দিন কেবাতু একাধিকবার কারাগারে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন, “আমি কোথায় যাব? কী করব?” কিন্তু কারাগারের কর্মীরা তাকে বলছিলেন, “তুমি মুক্ত, চলে যাও।” তিনি বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘণ্টাখানেক কারাগারের বাইরে ঘোরাফেরা করার পর ট্রেনে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেন।

প্রিজন সার্ভিস জানায়, এটি ছিল মানবিক ভুল, এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক সূত্র এই ঘটনাকে “অভিজ্ঞতার অভাবে ঘটে যাওয়া এক বিপর্যয়” বলে মন্তব্য করেছে।

এই ঘটনায় ব্রিটিশ সমাজে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রিমিনাল জাস্টিস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (CJWU) একে “গুরুতর দায়িত্বহীনতা” বলে অভিহিত করেছে। সংগঠনের সভাপতি অ্যারন স্টো বলেন, “এটি ভুক্তভোগী ও সমাজ উভয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, “বিচারব্যবস্থা আমাদের সম্পূর্ণভাবে হতাশ করেছে।”

কেবাতুর অপরাধগুলো তিনি ইংল্যান্ডে ছোট নৌকায় অবৈধভাবে আসার মাত্র আট দিন পরই ঘটান। তার গ্রেপ্তারের পর ইপিংয়ের বেল হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিচারক ক্রিস্টোফার উইলিয়ামস কেবাতুকে “উচ্চ পুনরাবৃত্তি ঝুঁকিপূর্ণ ও কৌশলী অপরাধী” বলে মন্তব্য করেন। মাত্র ৩১ দিন কারাভোগের পর ভুলবশত মুক্তি পাওয়া এই অপরাধীকে এখন ফের জেলে পাঠানো হয়েছে, এবং এবার তার পরবর্তী গন্তব্য হতে যাচ্ছে নিজ দেশ ইথিওপিয়া।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

লিজ ট্রাসের সামনে যতো চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক

সাইবার হামলার শিকার ব্রিটিশ রাজপরিবারের ওয়েবসাইট

যুক্তরাজ্যে অপরাধের শীর্ষে ক্লিভল্যান্ড!