4.6 C
London
January 30, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে খুচরা দোকানে সংঘটিত অপরাধ বাড়ছেঃ ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম

যুক্তরাজ্যে অপরাধপ্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন যে দোকানগুলিতে অপরাধ “নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।” যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন ৫৫,০০০ চুরির ঘটনা ঘটছে এবং সহিংস ঘটনার সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ৫০% বেড়েছে।

ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের (BRC) বার্ষিক অপরাধ সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন ৭০টিরও বেশি ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।

দোকানগুলিতে মৌখিক ও শারীরিক আক্রমণ, সহিংস হুমকি, যৌন ও বর্ণগত অপমানের ঘটনা ২০২০ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রেড বডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুচরা দোকানে চুরির ঘটনা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে— যা গত বছরের তুলনায় ২৫% বেশি। এতে খুচরা বিক্রেতাদের £২.২ বিলিয়ন ক্ষতি হয়েছে। সঙ্ঘবদ্ধ চক্র সারাদেশের দোকানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করছে।

দোকান চুরির বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গৃহস্থালির অর্থনৈতিক সংকটকে ধরা হলেও, খুচরা বিক্রেতারা বলছেন এটি মূলত সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের কারণে হচ্ছে। যারা নির্দিষ্টভাবে পণ্য চুরির উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তারা বলেন, ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে চালু হওয়া একটি আইন পরিবর্তনের ফলে £২০০ বা তার কম মূল্যের পণ্য চুরি করলে সাধারণত কারাদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া যায়, যা খুচরা ব্যবসাকে দুর্বল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

কো-অপের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর পল জেরার্ড হাউস অব লর্ডসের বিচার ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে জানান, তাদের দোকানগুলোতে খুচরা অপরাধ ৪৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে লোকেরা হুইলি বিন বা বিল্ডারের ব্যাগ নিয়ে এসে পুরো ক্যান্ডি, মদ বা মাংসের সেকশন খালি করে নিয়ে যাচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পুলিশের অগ্রাধিকারের অভাবও অপরাধ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। কারণ প্রাইভেট সিকিউরিটি স্টাফ কাউকে আটক করলেও পুলিশ অনেক সময় উপস্থিত হয় না।

বড় বড় খুচরা বিক্রেতাদেরও দোষারোপ করা হচ্ছে নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যা কমানোর মাধ্যমে খরচ কমানোর চেষ্টা করার জন্য, যা অপরাধ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। স্ব-পরিষেবা কাউন্টার ও স্ব-স্ক্যানিং ডিভাইস ব্যবহারও চুরির সুযোগ বাড়িয়েছে।

তবে, BRC জানিয়েছে যে খুচরা ব্যবসাগুলো অপরাধ মোকাবিলায় £১.৮ বিলিয়ন ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের £১.২ বিলিয়নের তুলনায় অনেক বেশি। এই খরচের মধ্যে সিসিটিভি, অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী, চুরি প্রতিরোধী ডিভাইস এবং শরীরে পরিধানযোগ্য ক্যামেরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

BRC-এর প্রধান নির্বাহী হেলেন ডিকিনসন বলেন, “খুচরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খুচরা কর্মীদের থুতু ছিটানো হচ্ছে, বর্ণবৈষম্যমূলক গালি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি দা দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যতদিন এটি চলতে থাকবে, অপরাধীরা ততটাই সাহসী ও হিংস্র হয়ে উঠবে। আমরা ৩০ লক্ষ খুচরা কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য এই অপরাধের মহামারীকে থামাতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, খুচরা চুরির ক্ষেত্রে £২০০-এর সীমা বাতিলসহ নতুন আইনের বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। সরকার ইতোমধ্যে খুচরা কর্মীদের ওপর হামলাকে পৃথক অপরাধ হিসেবে গণ্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

“অপারেশন পেগাসাস” নামে একটি উদ্যোগের অধীনে, ১৫টি বড় খুচরা প্রতিষ্ঠান পুলিশের সাথে কাজ করছে সংঘবদ্ধ খুচরা অপরাধ মোকাবিলার জন্য। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ শেয়ার করা হচ্ছে। তবে এটি শুধুমাত্র আন্তঃপুলিশ এলাকা সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য প্রযোজ্য।

ডিকিনসন বলেন, “শুধুমাত্র শিল্প, সরকার ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করলে এই ভয়াবহ প্রবণতাকে আমরা উল্টে দিতে পারব। পুলিশের উপস্থিতির উপর জনগণের বিশ্বাস কমে যাওয়ায় অপরাধীরা চুরি, হুমকি, হামলা ও নির্যাতনের লাইসেন্স পেয়েছে বলে মনে করছে। খুচরা বিক্রেতারা আগে কখনো এত বেশি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করেনি, কিন্তু তারা একা অপরাধ ঠেকাতে পারবে না। পুলিশকে প্রতিটি রিপোর্ট করা ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।”

শপওয়ার্কার্স ইউনিয়ন Usdaw-এর মহাসচিব প্যাডি লিলিস বলেছেন, “চুরির বৃদ্ধি কিছু এলাকায় দোকানগুলোকে অকার্যকর করে তুলছে, ফলে সম্প্রদায়গুলি অস্থির আচরণ ও দোকান বন্ধের সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। কর্মীরা সবসময় অপমান, হুমকি ও সহিংসতার আশঙ্কায় কাজ করছেন।”

তিনি বলেন, “আমরা BRC-এর সঙ্গে মিলে দীর্ঘদিন ধরে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন করছি এবং সরকার যে নতুন অপরাধ ও পুলিশিং বিল আনতে যাচ্ছে, তা আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
৩০ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

লন্ডনের প্রাক্তন পুলিশস্টেশনে মিলিয়ন পাউন্ডের গাঁজার খামার!

মেটপুলিশে বর্ণবাদ, বিবিসিতে প্রচারের পর বিরূপ পরিস্থিতি

অবৈধ অভিবাসীদের ফেরার জন্য ‘নিরাপদ’ বাংলাদেশ, ইতালির ঘোষণা