চ্যানেল টানেলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে লন্ডন থেকে প্যারিস, আমস্টারডাম ও ব্রাসেলসগামী সব ইউরোস্টার ট্রেন বাতিল হওয়ায় হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় পরে সীমিত আকারে কিছু সার্ভিস চালু হলেও ইউরোস্টার জানিয়েছে, যাত্রীরা তীব্র বিলম্ব ও শেষ মুহূর্তে বাতিলের ঝুঁকির জন্য প্রস্তুত থাকবেন।
ইউরোস্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেসব ট্রেন বাতিল হয়নি সেগুলোতেও স্বাভাবিক সূচি বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে যাত্রীদের ভ্রমণ অন্য তারিখে পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়, টিকিট পুনর্নির্ধারণে কোনো অতিরিক্ত ফি নেওয়া হবে না এবং চাইলে যাত্রীরা পুরো টাকা ফেরত বা ই-ভাউচার নিতে পারবেন।
এই অচলাবস্থার মূল কারণ হিসেবে চ্যানেল টানেলের ওভারহেড বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি এবং একটি LeShuttle ট্রেন বিকল হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য টানেলের সব রুট বন্ধ হয়ে যায় এবং ইউরোপমুখী যাতায়াত কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে চলাচলকারী অন্তত এক ডজন ইউরোস্টার সার্ভিস বাতিল করা হয়। অনেক যাত্রী লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস আন্তর্জাতিক স্টেশনে আটকা পড়ে বিকল্প পরিবহনের খোঁজ করতে থাকেন।
ভোগান্তির শিকার যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই পর্যটক হ্যালি অ্যাডামস ও হান্না হ্যাগার। তাদের ইউরোস্টার ট্রেন বাতিল হওয়ায় প্যারিস পৌঁছাতে তারা প্রায় ৫৮০ ডলার খরচ করে ফ্লাইট কিনতে বাধ্য হন। যদিও তারা ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত পেয়েছেন, তবে লন্ডনে অতিরিক্ত হোটেল খরচ এবং প্যারিসের হোটেল বুকিং বাতিলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না।
একইভাবে মেক্সিকো থেকে আসা একটি পরিবার জানায়, তাদের জীবনের স্বপ্নের ইউরোপ সফর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। প্যারিসগামী ট্রেনে ওঠার পর যান্ত্রিক সমস্যার কারণে ট্রেনটি আবার ফিরিয়ে আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, সামনে কোনো নিশ্চিত বিকল্প না থাকায় তারা ফ্লাইট বা ফেরির খোঁজ করছেন।
ফ্রান্সের কালে এলাকায় LeShuttle সার্ভিস ব্যবহারকারী যাত্রীরাও দীর্ঘ সময় আটকে পড়েন। এক ব্রিটিশ যাত্রী জানান, তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের ভেতর অপেক্ষা করেছেন। খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং অনিশ্চয়তায় অনেক যাত্রী হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।
ন্যাশনাল রেল যাত্রীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, যাদের ইউরোস্টার ট্রেন বাতিল হয়েছে তারা যেন সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনে না আসেন। যুক্তরাজ্যের পরিবহন বিভাগ বলেছে, ওভারহেড কেবল মেরামতের কাজ চলায় পুরো দিনজুড়েই ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
ইউরোস্টার কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে চ্যানেল টানেলের দুটি প্রধান লাইনের মধ্যে মাত্র একটি ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। সীমিত সক্ষমতা নিয়ে বিকেল থেকে ধীরে ধীরে কিছু ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। লন্ডন থেকে ব্রাসেলসগামী একটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ছেড়ে যায়, তবে সন্ধ্যার পরেও মাত্র কয়েকটি সার্ভিস চালু রাখা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে বিকল হওয়া LeShuttle ট্রেনটি টানেল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং অপারেটর জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় কোনো যাত্রী টানেলের ভেতরে আটকে ছিলেন না। LeShuttle কর্তৃপক্ষ দেরির জন্য ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে, ধীরে ধীরে সার্ভিস স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে এবং রাত ও পরদিন সকালে অতিরিক্ত শাটল যোগ করা হবে।
চ্যানেল টানেলমুখী গাড়ির চাপ কমে আসায় ফোকস্টোনের কাছে M20 মহাসড়কের যানজটও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তবে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

