এক মানব পাচার মামলায় যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, হোম অফিস জবরদস্তি শ্রমের সংজ্ঞা সংকীর্ণভাবে ব্যাখ্যা করেছে, যা আইনি ও নৈতিকভাবে সঠিক নয়।
মামলার বাদী একজন আলজেরিয়ান নাগরিক, যিনি ২০২২ সালে ভিজিটর ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে দেশে ফিরে না গিয়ে নির্মাণকাজে নিয়োজিত হন। তাকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করানো হয়, ঘণ্টায় মাত্র £৬–৭ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, যার কিছু অংশ আটকে রাখা হয়। বিশ্রাম ও থাকার সুব্যবস্থার অভাব এবং অমানবিক পরিবেশে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২০২৪ সালে ব্রিটিশ রেড ক্রসের সহায়তায় তিনি ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজমে রেফার হন। কিন্তু হোম অফিস তার আবেদন নাকচ করে, যুক্তি দেয় তিনি স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন এবং জবরদস্তি শ্রমের শিকার নন।
হোম অফিস স্বীকার করে যে তাকে নিয়োগ, স্থানান্তর ও হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তার দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া হয়েছে। তবুও, তারা দাবি করে যে তিনি স্বেচ্ছায় কাজ করছিলেন, তাই ‘উদ্দেশ্য’ অংশ পূরণ হয়নি।
ব্রিটিশ রেড ক্রস এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা মাত্র দুই দিনের মধ্যে নাকচ হয়। এরপর মামলাটি হাইকোর্টে গড়ায়।
আদালত বলে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জবরদস্তি শ্রম বলতে বোঝায়—কাজটি যদি শাস্তির হুমকিতে করানো হয় এবং ব্যক্তি স্বেচ্ছায় না করে থাকেন। এই শাস্তি মানসিক চাপও হতে পারে।
আদালত মন্তব্য করে, হোম অফিস বাদীর দুর্বলতা ও হুমকি—যেমন বাসস্থান থেকে বের করে দেওয়ার ভয়, মজুরি আটকে রাখা—এসব উপেক্ষা করেছে।
রায়ে বলা হয়, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কাজ করাকে স্বেচ্ছায় কাজ বলা যাবে না, বরং পুরো পরিস্থিতি ও কাজের পরিবেশ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আদালত দুইটি সিদ্ধান্ত—মূল যুক্তিসঙ্গত ভিত্তির সিদ্ধান্ত ও পরে দেওয়া পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত—দুটিকেই অবৈধ ঘোষণা করে।
এই মামলাটি মানব পাচার ও জবরদস্তি শ্রম সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে হোলিস্টিক মূল্যায়নের গুরুত্ব এবং হোম অফিসের অনমনীয় আচরণের আইনি ঝুঁকি স্পষ্ট করে তুলেছে।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
২৬ জুন ২০২৫