যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস বিভাগ (DWP)-এর নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে শত শত উপকার বা বেনিফিটভোগীর মৃত্যুর ঘটনা ও গুরুতর ক্ষতির পর, একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ বেনিফিট ক্লেইমারদের জন্য আরও শক্তিশালী সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে। কমিটি বলেছে, DWP কর্তৃপক্ষ যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন, তাহলে অনেকেই প্রাণ হারানোর মতো শোকে আক্রান্ত হতেন না।
কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে মানসিক রোগে ভুগে থাকা অক্ষম এররল গ্রাহাম বেনিফিট কাটা পড়ায় অনাহারে মারা যান। ২০১৯ সালে ভুলভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে বঞ্চিত ফিলিপা ডে মানসিক উৎকণ্ঠায় ওভারডোজ নিয়ে প্রাণ হারান। এসব ঘটনায় DWP কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ও সহায়তায় চরম ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে।
দায়িত্বশীলরা বরং খরচ কমানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, যার ফলে দুর্বল শ্রেণির প্রতি সহানুভূতি ও সহায়তা কমেছে। অনেক বেনিফিট ক্লেইমার তাদের প্রশাসনিক জটিলতায় মানসিক কষ্ট ও চাপ অনুভব করছেন। এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, “যে সিস্টেম আমাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা, সেটাই যেন আমাদের জীবন নিঃশেষ করছে।”
কমিটির চেয়ারপারসন ডেবি আব্রাহামস বলেন, “DWP-র সঙ্গে যোগাযোগের কারণে মানুষের মানসিক অবস্থা এতখানি খারাপ হচ্ছে যে, অনেকে আর্থিক সহায়তা না পেয়ে জীবন বাজি রেখেছে। এটা সুরক্ষার পরম ব্যর্থতা।”
২০২০ সাল থেকে অন্তত ২৪০টি অভ্যন্তরীণ তদন্তে DWP কর্মকর্তাদের অবহেলা বা ভুল পদক্ষেপ দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে, কমিটি বলছে, এই সমস্যার প্রকৃত পরিধি এখনও অনির্ধারিত এবং DWP নিজেই যথাযথ তদন্ত করছে না।
তাই কমিটি একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে, যা গুরুতর নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য DWP-র কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া DWP-র ওপর আইনি সুরক্ষা দায়িত্ব আরোপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ বাড়াবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা Rethink Mental Illness-এর প্রধান নির্বাহী মার্ক উইনস্ট্যানলি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগা দুর্বল মানুষরা এই সিস্টেমের ব্যর্থতার শিকার হয়েছে। আইনি সুরক্ষা দায়িত্ব হলে তাদের জীবন রক্ষায় কাজ করা সম্ভব হবে।”
DWP-র মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকার একটি নতুন সুরক্ষা নীতি নিয়ে কাজ করছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের জন্য কার্যকর সহায়তা নিশ্চিত করবে এবং জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করবে। তারা সবাইকে পরামর্শে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
এই রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে, যুক্তরাজ্যে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও সংবেদনশীল মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও সেবার মান পরিবর্তন করা প্রয়োজন, অন্যথায় মানবিক সংকট এড়ানো কঠিন হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ মে ২০২৫