ভাইরাল ভিডিও ও ট্রেন্ডের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত টিকটক এখন যুক্তরাজ্যের ই-কমার্স খাতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। টিকটক শপে ইতোমধ্যে ২ লাখের বেশি ছোট ও মাঝারি ব্যবসা যুক্ত হয়েছে, যেখানে Marks & Spencer, Sainsbury’s, Samsung, QVC ও Clarks-এর মতো বড় ব্র্যান্ডও সরাসরি পণ্য বিক্রি করছে।
২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে চালু হওয়া টিকটক শপ ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড গড়ে। ওই দিনে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৭টি পণ্য বিক্রি হয়। ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও সাইবার মানডে মিলিয়ে বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যা প্ল্যাটফর্মটির দ্রুত বাণিজ্যিক বিস্তারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
টিকটক শপের মূল শক্তি এর ইন-অ্যাপ কেনাকাটার ব্যবস্থা। ভিডিও ও লাইভস্ট্রিমে যুক্ত লিংকের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অ্যাপ ছাড়াই পণ্য কিনতে পারছে। ব্র্যান্ডগুলো নিজেরা কনটেন্ট তৈরি করে পণ্য বিক্রি করতে পারে, আবার ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করেও বিক্রি বাড়াচ্ছে। বিক্রির অর্থ টিকটক, বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট ক্রিয়েটরের মধ্যে ভাগ হয়।
বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে Sainsbury’s উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। ইনফ্লুয়েন্সার র্যাচেল স্পাইসারের সঙ্গে যৌথ প্রচারণায় তাদের ‘Tu Christmas pyjamas’ ছয় দশমিক ছয় মিলিয়ন ভিউ পায় এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই পণ্যটি স্টক শেষ হয়ে যায়। Marks & Spencer-এর লাইভস্ট্রিমেও বিপুল সাড়া মিলেছে; একটি লাইভে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার দর্শক যুক্ত হন এবং গড়ে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি করে পণ্য বিক্রি হয়।
ছোট ব্যবসার জন্যও টিকটক শপ নতুন সুযোগ তৈরি করছে। এআইয়ের প্রভাবে সার্চ ইঞ্জিনে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা বিকল্প পথ হিসেবে টিকটক বেছে নিচ্ছেন। নিউক্যাসলভিত্তিক অনলাইন মাংস বিক্রেতা ‘The Fat Butcher’ এ বছর প্রথমবারের মতো টিকটক শপে তাজা টার্কি বিক্রি শুরু করেছে।
মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ করে বিউটি ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলো এখানে বেশি লাভবান হচ্ছে। গ্লোবাল মার্কেটিং এজেন্সি Iris-এর সোশ্যাল স্ট্র্যাটেজি ডিরেক্টর ড্যানিয়েল ডুলাহান বলেন, টিকটক শপ সরাসরি হঠাৎ কেনাকাটার প্রবণতার সঙ্গে মিলে যায়, যা বিক্রি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে।
লন্ডনভিত্তিক গয়নার ব্র্যান্ড L’ERA টিকটক থেকে চলতি বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ড আয় করবে বলে জানিয়েছে। লাইভ শপিংয়ের ওপর নির্ভরশীল এই ব্র্যান্ডটি সপ্তাহে নিয়মিত একাধিক লাইভস্ট্রিম চালায় এবং বড় উৎসবের সময়ে তা আরও বাড়ানো হয়। টিকটক শপের মাধ্যমে তাদের একক অর্ডারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ পাউন্ডের বেশি বিক্রিও হয়েছে।
তবে দ্রুত সাফল্যের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও আছে। ব্যবসা ও সোশ্যাল মিডিয়া পরামর্শক জুলস ব্রিমের মতে, টিকটক শপ কিছু ছোট ব্র্যান্ডের জন্য সত্যিই গেমচেঞ্জার হলেও এতে দামের প্রতিযোগিতা তীব্র হতে পারে, নিয়মিত কনটেন্ট তৈরির চাপ বাড়তে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্র্যান্ড গঠনের বদলে স্বল্পমেয়াদি ট্রেন্ডের পেছনে ছোটা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
সব মিলিয়ে, টিকটক শপ যুক্তরাজ্যের ই-কমার্স বাজারে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে, যেখানে বিনোদন ও কেনাকাটা একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে এবং ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় ব্র্যান্ড—সবার জন্যই সুযোগ ও ঝুঁকি দুটোই বাড়ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

