যুক্তরাজ্যে কেয়ার হোমগুলোকে বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমতি আর দেওয়া হবে না—এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার। নেট অভিবাসন হ্রাস করতে নেওয়া নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন এই পরিবর্তনে, কেয়ার সেক্টরের নিয়োগদাতাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কুপার বলেছেন—প্রোভাইডারদের বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেশেই থাকা বিদেশিদের মধ্য থেকে কর্মী নিয়োগ করতে হবে অথবা বিদ্যমান ভিসা বাড়াতে হবে।
সোমবার তিনি যে বড় অভিবাসন সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন, এটি তারই পূর্বাভাস।
এছাড়াও জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত বিদেশি নাগরিকদের এখন থেকে বিচার শেষে নয়, অপরাধ সংগঠনের পরপরই নির্বাসনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
রবিবার একাধিক সাক্ষাৎকারে কুপার বলেন, সরকার নেট অভিবাসনের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করবে না, তবে নিম্ন দক্ষতার খাতে নিয়োগ হ্রাসে লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
স্কাইলাইভে তিনি বলেন: “ আমরা নিম্ন-দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের জন্য নতুন ভিসা নিয়ন্ত্রণ আনতে যাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, এখন সময় এসেছে উচ্চ দক্ষতার অভিবাসনের ওপর জোর দেওয়ার এবং দেশীয় প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ করার। এজন্য যুক্তরাজ্যেই প্রশিক্ষণের নতুন শর্ত আরোপ করা হবে যাতে আমাদের নিজস্ব কর্মীরা সুযোগ পায়। পাশাপাশি আমরা বিদেশ থেকে কেয়ার কর্মী নিয়োগের ভিসা বন্ধ করে দিচ্ছি।”
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কেয়ার হোমগুলোকে উচিত হবে এমনসব বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া, যারা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে এসে প্রতারিত হয়েছেন এবং ভালো নিয়োগদাতা খুঁজছেন। বিদ্যমান ভিসা বাড়ানো বা অন্যান্য ভিসাধারীদের থেকেও কর্মী নিতে পারবে তারা। তবে কুপার পরিষ্কার জানিয়ে দেন, “বিদেশ থেকে নতুন করে কেয়ার কর্মী নিয়োগের সময় শেষ হয়েছে।”
যদিও কুপার নেট অভিবাসনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা দেননি, তিনি বলেন, কিছু নির্দিষ্ট ভিসা পরিবর্তনের মাধ্যমে আগামী এক বছরে প্রায় ৫০,০০০ নিম্ন-দক্ষ ভিসা হ্রাস পেতে পারে।
বর্তমানে কেবল এক বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত বিদেশিদের ব্যাপারেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত হয়। তবে নতুন নিয়মে যেকোনো অপরাধে দণ্ডিত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য হোম অফিসকে জানাতে হবে। এতে করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক আগত অপরাধীদের বিরুদ্ধে।
বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, স্ট্রিট ক্রাইম এবং ছুরি সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের সহজেই বহিষ্কার করা যাবে।
যেকোনো বিদেশি নাগরিক যদি যৌন অপরাধীদের তালিকায় যুক্ত হয়, তবে সে “গুরুতর অপরাধী” হিসেবে বিবেচিত হবে এবং যুক্তরাজ্যে আর আশ্রয় পাওয়ার কোনো অধিকার থাকবে না—সাজা যত ছোটই হোক না কেন।
যেসব প্রতিষ্ঠান বারবার প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে যে তারা দেশীয় কর্মী নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে, তাদের স্পনসর করার অধিকার বাতিল করা হতে পারে। ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইটি খাত এতে বিশেষ নজরদারিতে থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে থাকার নিয়ম আরও কঠিন করা হবে। অধিকন্তু, কর্মরত বিদেশিদের ইংরেজির দক্ষতা উন্নত করতে হবে, যদিও A-লেভেল সমমানের চাহিদা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
রিফর্ম ইউকের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং তাদের অভিবাসন বিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেবার সরকার হতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ফহারনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মে মাসের স্থানীয় নির্বাচনে রিফর্ম ১০টি কাউন্সিলে জয় লাভ করে এবং জাতীয় জনমত জরিপে এখনও তারা এগিয়ে আছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১১ মে ২০২৫