জাতিসংঘের একজন নারী বিচারক ও উগান্ডার হাইকোর্টের বিচারপতি লিডিয়া মুগাম্বেকে যুক্তরাজ্যের আদালত ছয় বছরের বেশি কারাদণ্ড দিয়েছে। এক উগান্ডান নারীকে দাসের মতো কাজ করতে বাধ্য করার দায়ে বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড ক্রাউন কোর্ট এই রায় ঘোষণা করে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, বিচারপতি মুগাম্বে ভুক্তভোগী তরুণীকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে আনেন এবং তাকে ঘরের কাজ ও শিশু দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত করেন। অথচ কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, বরং তরুণীর পাসপোর্ট ও ভিসা আটকে রেখে তাকে জোরপূর্বক দীর্ঘ সময় কাজ করানো হয়। ভুক্তভোগী আদালতে বলেন, “আমি প্রতিদিন ভয়ে কাটাতাম। পালানোর উপায় ছিল না।”
জাতিসংঘের বিচারক হয়েও মানবাধিকার লঙ্ঘনঃ
বিচারক মুগাম্বে দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করে আসছিলেন এবং জাতিসংঘের বিচার বিভাগেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠে আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
বিচারক ফক্সটন রায়ের সময় বলেন, “এই অপরাধ একজন দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক বিচারকের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি তার ক্ষমতা ও অবস্থানের অপব্যবহার করে একজন অসহায় নারীকে শোষণ করেছেন।”
কূটনৈতিক দায়মুক্তি প্রত্যাহারঃ
মুগাম্বে গ্রেপ্তারের সময় দাবি করেন, তিনি একজন আন্তর্জাতিক বিচারক এবং কূটনৈতিক দায়মুক্তি প্রাপ্ত। তবে জাতিসংঘ তার দায়মুক্তি প্রত্যাহার করে, ফলে যুক্তরাজ্যের আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা চালানো সম্ভব হয়।
সাহসী ভুক্তভোগীর প্রশংসাঃ
আদালত ভুক্তভোগী নারীর সাহসিকতার প্রশংসা করেছে। রায়ে বলা হয়, “ভুক্তভোগী ভয়কে জয় করে ন্যায়বিচারের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তার এই অবস্থান ভবিষ্যতে অন্য অনেক শোষিত মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
এই রায় আন্তর্জাতিক মহলে দাসত্ব, মানবপাচার ও আধুনিক দাসপ্রথার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠাল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মানবাধিকারের নামে যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের আচরণের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা যে কতটা জরুরি – এই রায় তার প্রমাণ।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৩ মে ২০২৫