TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে নৈতিকতার উচ্চ মানদণ্ডই স্টার্মারের বিপদঃ টিম লেবারে একের পর এক কেলেঙ্কারি

বিরোধী অবস্থায় যে নৈতিকতার বুমেরাং কিয়ার স্টারমার অন্যদের দিকে ছুড়েছিলেন, ক্ষমতায় এসে সেটিই এখন ফিরে আঘাত করছে কিয়ার স্টার্মারকে। এক সময় ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতি’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনমনে আস্থা তৈরি করা এই লেবার নেতা এখন তার নিজের মন্ত্রিসভা ও আচরণ নিয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখে।
ক্ষমতা গ্রহণের আগে স্টার্মার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার সরকার হবে “একেবারে পরিচ্ছন্ন”— কিন্তু ছয় মাস না পেরোতেই তার প্রশাসন নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিনি নিজেই বিনামূল্যে চশমা, পোশাক এবং টেলর সুইফট কনসার্টের টিকিট নেওয়ার ঘটনায় সমালোচিত হন। তার ‘নৈতিক স্বচ্ছতা’র ভাবমূর্তি তাতে বড় ধাক্কা খায়।

স্টার্মারের সরকারে পরপর পদত্যাগ এখন নিত্য ঘটনা। পরিবহন মন্ত্রী লুইস হেইগ প্রতারণা মামলার কারণে পদ ছাড়েন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক আত্মীয়তার বিতর্কে সরে দাঁড়ান, এবং উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার ফ্ল্যাটের স্ট্যাম্প ডিউটি ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এই তিনটি ঘটনাই সরকারের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়িয়েছে এবং জনমনে প্রশ্ন তুলেছে— “যে সরকার নৈতিকতার পতাকা হাতে নিয়েছিল, তারাই কি এখন নতুন কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছে?”

সর্বশেষ ঝড় উঠেছে চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভসকে ঘিরে। জানা যায়, তিনি স্থানীয় কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়াই লন্ডনের বাড়ি ভাড়া দেন, যা আইনত নিষিদ্ধ। লাইসেন্স ছাড়া বাড়ি ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার জরিমানার পাশাপাশি মন্ত্রীসভার আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ও ওঠে।

ডাউনিং স্ট্রিট প্রথমে বিষয়টি তদন্তে অনিচ্ছা দেখালেও পরে রিভস দাবি করেন, তার ভাড়া সংস্থা বিষয়টি জানায়নি এবং “অবহেলার জন্য দুঃখপ্রকাশ” করেছে। কিন্তু বিরোধীরা বলছে, রিভসের বক্তব্যে অসংগতি আছে— তিনি প্রথমে কিছু না জানার কথা বললেও পরে সংস্থার ওপর দোষ চাপান।

কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনাকে আড়াল করতে পারেন না। যদি আইন ভাঙা হয়ে থাকে, তবে রিভসকে বরখাস্ত করতে হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টার্মারের সবচেয়ে বড় শক্তি— তার নৈতিক ইমেজ— এখনই তার দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী অবস্থায় তিনি যে কঠোর নৈতিক মানদণ্ডের প্রচার করেছিলেন, ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

“তুমি একইসঙ্গে আইনপ্রণেতা ও আইনভঙ্গকারী হতে পারো না”— এই বিখ্যাত উক্তিটি একসময় বরিস জনসনের পতনের দাবিতে স্টার্মার ব্যবহার করেছিলেন। আজ অনেকেই সেই কথাই তার উদ্দেশে ফিরিয়ে দিচ্ছে।

ব্রিটিশ রাজনীতির পুরনো তত্ত্বটি আবারও সত্য প্রমাণিত হচ্ছে— “বিরোধী অবস্থায় ছোড়া বুমেরাং ক্ষমতায় গিয়ে ফিরে আসে।” এখন প্রশ্ন একটাই: নৈতিকতার উচ্চভূমিতে দাঁড়িয়ে স্টার্মার কতদূর টিকে থাকতে পারবেন?

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

চলে যায় প্রধানমন্ত্রী থেকে যায় ল্যারি

যুক্তরাজ্যে টাটা’র পুনর্গঠন পরিকল্পনাঃ বয়স্ক অ-ভারতীয় কর্মীদের ছাটাই

যুক্তরাজ্যে চাকুরির বাজারে মন্দাঃ গ্র্যাজুয়েট ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে বিপর্যস্ত