TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছরে বন্ধ হওয়া বেশির ভাগ ফার্মেসিই দরিদ্র এলাকায়

ইংল্যান্ডে কয়েক বছর আগে ১১ হাজারের বেশি ফার্মেসি সচল ছিল, যার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় হাজার খানেক। দেশটির ফার্মাসিস্টদের অফিশিয়াল ডাটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংল্যান্ডের কিছু অংশে গত ছয় বছরে পাঁচটির মধ্যে একটির বেশি ফার্মেসি বন্ধ হয়ে গেছে। ফার্মেসি বন্ধের এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে দেশটির দরিদ্র মানুষ বসবাস করে এমন এলাকায়।

২০১৭ সালের শেষ থেকে এ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ৯৫৩টি ফার্মেসি বন্ধ হয়ে যায়। এ সংখ্যা দেশটির মোট ফার্মেসির ৭ দশমিক ৭ শতাংশেরও বেশি। ওয়েলসে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৪ শতাংশ ওষুধের দোকান। তবে এ সংখ্যা কিছুটা স্থিতিশীল আছে স্কটল্যান্ডে।

ফার্মাসিউটিক্যাল কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, ইংল্যান্ডে ফার্মেসি বন্ধের হার দ্রুত বাড়ছে। শুরুতে ২০১৭ সালে ১৫টি ফার্মেসি বন্ধ হয়েছিল। গত বছর নাগাদ সেটি ৩৭২-এ এসে দাঁড়ায়, যা ২০২২ সালে বন্ধ হওয়া সংখ্যার তিন গুণেরও বেশি। এছাড়া ২০১৬ সালের পর থেকে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক। আবার ২০২৩ সালে ওয়েলসে ১২টি এবং স্কটল্যান্ডে ছয়টি ফার্মেসি বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফার্মেসি বন্ধ হওয়া বেশির ভাগ এলাকায় বসবাস করে নিম্ন আয়ের মানুষ, যা তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

সাসেক্সের একটি ফার্মেসির মালিক ডেরভিস বলেন, ‘ফার্মেসিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃদয়বিদারক। কারণ রোগীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করে। তাদের অনেকেই বয়স্ক বা দুর্বল। তহবিল সংকটের কারণে আমরা চাইলেও এ স্তরের যত্ন ও পরিষেবা দৃঢ়ভাবে চালিয়ে যেতে পারি না।’৷

ফার্মেসির সংখ্যা কমে আসায় চাপ বাড়ছে ইংল্যান্ডের জেনারেল প্র‌্যাক্টিসনার বা জিপির উপর। জিপি বলতে মূলত একজন সাধারণ চিকিৎসককে বোঝায়, যিনি নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে সব ধরনের চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডে ‘ফার্মেসি ফার্স্ট’ উদ্যোগ চালু হয়। সেখানে সাতটি সাধারণ সমস্যায় জিপির পরিবর্তে ফার্মাসিস্টদের কাছে নেয়ার কথা বলা হয়। ক্রমবর্ধমান হারে ফার্মেসি বন্ধ হয়ে আসায় চাপ বাড়ছে জিপির উপর।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যদি ফার্মেসি বন্ধ না হতো তবে ২০১৮ সালের শেষ থেকে আনুমানিক ৫৫ লাখ সেবাগ্রহীতা এড়াতে পারত জিপি। ইংল্যান্ডে গত বছর প্রায় ১০ লাখ জিপি অ্যাপয়েন্টমেন্ট রেকর্ড করা হয়েছে।

ওকিংয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ছয় বছরে ফার্মেসির সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। ওয়েস্ট বার্কশায়ার, এক্সেটার ও পেন্ডলে এ সংখ্যা প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের ১৪টি কাউন্সিল এলাকা তাদের ফার্মেসির অন্তত এক-পঞ্চমাংশ হারিয়েছে।

ন্যাশনাল ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী পল রিস বলেন, ‘ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনুযায়ী বার্ষিক মূল তহবিলের খুব বেশি অংশ ফার্মেসি খাতে ব্যয় করা হয় না। অনেক ফার্মেসি চালু থাকার জন্য পরিবারের মধ্যে ধার ও বাড়ি বন্ধকের ওপর নির্ভর করতে হয়।’

এদিকে একের পর এক ফার্মেসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘ফার্মেসি ফার্স্ট’-এর মতো স্কিম হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ইনডিপেনডেন্ট মাল্টিপল ফার্মেসির প্রধান নির্বাহী ও ফাইট ফর ফার্মাসিস ক্যাম্পেইনের প্রতিষ্ঠাতা ড. লায়লা হ্যানবেক। তার মতে, ফার্মেসির জন্য তহবিল বাড়াতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। কারণ সরকারি সমর্থন ছাড়া ফার্মেসিগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর এভাবে ফার্মেসি বন্ধ হতে থাকলে জিপি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আরো বাড়বে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০২ এপ্রিল ২০২৪

আরো পড়ুন

সৌদি রাজপুত্রের যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা

যুক্তরাজ্যে খারাপ আবহাওয়ার কারণেও পেতে পারেন নগদ অর্থ

বিবিসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

নিউজ ডেস্ক