যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ ৫০ বছর অবস্থান করার পর অবসরপ্রাপ্ত ৭৪ বছর বয়সী এক ঘানায়ানকে হোম অফিস জানিয়েছে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক নন। যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব নিতে হলে তাকে আরো এক যুগ অপেক্ষা করতে হবে।
উইরালে বসবাস করা নেলসন শারডে ৫০ বছর হতে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। তিনি নাগরিক হিসাবে যেসব সুবিধা তা উপভোগ করে এসেছেন দীর্ঘ দিন হতে। তার কাজের জীবনের বড় অংশ তিনি যুক্তরাজ্য সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে গিয়েছেন। এনএইচএস সুবিধা সহ সকল সুবিধা
ব্যবহার করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত নিউজ এজেন্ট মিঃ নেলসন শারডে ১৯৭৭ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় ইউকেতে প্রবেশ করেছিলেন। যেখানে তিনি অ্যাকাউন্টিংয়ে অধ্যয়ন করেন। স্টুডেন্ট ভিসা থাকাকালীন সময়ে তার কাজ করার অনুমতি ছিল। তার জন্ম ঘানাতে তবে তার শিক্ষাজীবন তিনি ইউকেতে সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
তিনি তার জীবনে সাউদাম্পটনে মাদার্স প্রাইড ব্রেড, কিপলিং কেক এবং উইনচেস্টারে বেনডিকের চকোলেট তৈরি করার কাজও করেছেন তার জীবনে। তিনি জানান কাজ করার অধিকার নিয়ে তিনি কখনও জিজ্ঞাসা হন নাই। দীর্ঘদিন দিনের কাজের জীবনে বহু ট্যাক্স প্রদান করেছেন ব্রিটিশ সরকারকে।
মিঃ শারডে একজন ব্রিটিশ মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং নিজের ব্যবসা পরিচালনার জন্য ওয়ালাসিতে চলে যান। নেলসন নিউজ নামে তার একটি নিউজ এজেন্ট ছিল। তবে পরবর্তীতে তার প্রথম বিয়ের ডিভোর্স হয়ে গেলে তিনি আরো একজন ব্রিটিশ মহিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় বিয়েতে তার দুটি সন্তান জন্ম নেয় ছেলে জ্যাকব এবং অ্যারন।
মিঃ শারডে বলেন, “আমি আমার সন্তানদের সর্বোত্তম উপায়ে শিক্ষিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। যাতে তাদের উভয়ই সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল এবং একজন গবেষণা বিজ্ঞানী এবং অন্যজন জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করে।”
মিঃ শারডে আরো জানান, তিনি তার জীবনে কখনও যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেননি কারণ তার প্রয়োজন ছিল না। নিজের বাড়ি ও আবাসস্থল হিসাবে যুক্তরাজ্যেই জীবন কাটিয়ে ফেলেন। তিনি প্রপার্টি কিনেছেন যুক্তরাজ্যে এবং মর্গেজ চালিয়ে গিয়েছি। কোনোদিন কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হইনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে জানা যায়, মিঃ শারডে জুরি সার্ভিস করেছিলেন এমন কি সাহসিকতার জন্য পুলিশের পক্ষ হতে পুরষ্কৃত হয়েছিলেন। খালি হাতে ডাকাত দলকে প্রতিহত করে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
কিন্তু ২০১৯ সালে, যখন তিনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তার অসুস্থ মাকে ঘানাতে দেখতে যাওয়ার জন্য তখনই বিপত্তি বাঁধে। হোম অফিস হতে তখন তাকে বলা হয় তিনি ব্রিটিশ নন। হোম অফিস জানিয়েছে যে যুক্তরাজ্যে থাকার কোনও অধিকার তার নেই। হোম অফিস কর্মকর্তারা তাকে ১০ বছর রুটে আবেদনের পরামর্শ দেয়। যা তাকে ভ্যাবাচেকা খাইয়ে দেয়।
প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে উঠা মিঃ শারডে বলেন, “আমাকে ১০ বছর রুটের মধ্য দিয়ে যেতে বলা একটি শাস্তি আমার জন্য এবং এটি কোনওভাবেই ন্যায্য নয়। আমি বুঝতে পারছি না কেন এই হট্টগোল কারণ আমি আমার জীবন, আমার পুরো আত্মাকে এই দেশে রেখে দিয়েছি।”
উল্লেখ্য যে, গ্রেটার ম্যানচেস্টার ইমিগ্রেশন এইড ইউনিটের (জিএমআইএইউ) আইনজীবী নিকোলা বার্গেসের সহায়তায় মিঃ শারডে এখন হোম অফিসকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছেন।
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন: “চলমান আইনী কার্যক্রম সম্পর্কে মন্তব্য করা অনুচিত হবে।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৬ মে ২০২৪