15 C
London
April 17, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ভাতা কর্তন হলে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীরা সিস্টেম হতে মুছে যাবেঃ বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

যুক্তরাজ্য সরকারের £৫ বিলিয়ন মূল্যের প্রতিবন্ধী ভাতা কর্তন কর্মসূচির ফলে কয়েক লক্ষ মারাত্মক অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষ “অদৃশ্য” হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যারা স্থানীয় সহায়তা পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বার্তা দিয়েছেন।

পরামর্শক সংস্থা “পলিসি ইন প্র‍্যাক্টিস”-এর মতে, যারা পার্সোনাল ইন্ডিপেনডেন্স পেমেন্ট (PIP) বা অক্ষমতার ভাতা পাওয়ার যোগ্য নন, তাদের জন্য স্থানীয় কাউন্সিল কর্তৃক সহায়তা পাওয়া “প্রায় অসম্ভব” হয়ে যাবে।

এর ফলে ক্যান্সার, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ও ফুসফুসের রোগসহ জীবন-সীমাবদ্ধ অসুস্থতায় আক্রান্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু মানুষ কার্যত সিস্টেম থেকে মুছে যাবে, এবং এতে প্রতিরোধমূলক সহায়তা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।

পলিসি ইন প্র‍্যাক্টিসের একটি ব্রিফিং অনুসারে, এই পরিবর্তনের ফলে ২.৩ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী মানুষ পার্সোনাল ইন্ডিপেনডেন্স পেমেন্ট এবং ইউনিভার্সাল ক্রেডিটের অক্ষমতা অংশে প্রবেশাধিকার হারাবেন। তারা বছরে কমপক্ষে £৮,১০০ পাউন্ড হারাবেন। আরও প্রায় ৬ লাখ যারা ইউনিভার্সাল ক্রেডিট দাবি করেন না, তারা ভবিষ্যতে পার্সোনাল ইন্ডিপেনডেন্স পেমেন্ট পাওয়ার যোগ্য হবেন না বা অধিকার হারাবেন।

আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি, প্রতিবন্ধী মানুষজন স্থানীয় যত্ন বা সেবা ব্যবস্থায় অদৃশ্য হয়ে পড়বেন। কারণ এই ব্যবস্থাগুলো প্রতিবন্ধী ভাতার উপর ভিত্তি করে গৃহনির্মাণ, কর ছাড় ও ঋণ আদায় সংক্রান্ত সুরক্ষা প্রদান করে।

ভাতা হারানোর মানে তারা হাউজিং ও গৃহহীনতার মূল্যায়নে অগ্রাধিকার হারাবেন, ফলে “দীর্ঘস্থায়ী গৃহহীনতার” ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

যারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করছেন কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাতা-সংযুক্ত সহায়তা পাচ্ছেন না, সেই মারাত্মক অসুস্থ মানুষের স্থানীয় যত্ন ব্যবস্থায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়াই এই পরিবর্তনের “সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়” বলে জানানো হয়েছে।

এখন পর্যন্ত, ভাতা ব্যবস্থা সবসময়ই কাজ করতে অক্ষমদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সহায়তা করেছে। কিন্তু এই সংস্কারে অসুস্থতাকে অস্বীকার করা হবে, যা একেবারে নতুন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবর্তন। তবে পরামর্শ সংস্থা জানিয়েছে, অসুস্থতাকে উপেক্ষা করলেই তা চলে যায় না।”

সরকার যাদের জীবন এই সিদ্ধান্তে ওলটপালট হয়ে যাবে, তাদের কথা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শুনছে না এবং NHS ও স্থানীয় সরকারে এর প্রভাব নিয়েও সঠিকভাবে পরামর্শ নিচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেছে পরামর্শক সংস্থা।

পলিসি ইন প্র‍্যাক্টিসের পরিচালক দেবেন ঘেলানি বলেন, “ অসুস্থ ও অক্ষম দাবিকারীরা ভাতা ব্যবস্থায় অদৃশ্য হয়ে যাবেন এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তার ব্যয় অন্য সংস্থার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ফলে ট্রেজারির সম্ভাব্য সাশ্রয়ও কমে যাবে।”

আগামী বছর থেকে শুরু হওয়া এই পরিবর্তনে ৩০ লক্ষেরও বেশি যুক্তরাজ্যের পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কিছু পরিবার বছরে £১০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ হারাবেন। সরকারিভাবে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, ২.৫ লাখ মানুষ (যার মধ্যে ৫০ হাজার শিশু রয়েছে) দারিদ্রতার মুখে পতিত হবেন।

সরকারের মন্ত্রীদের দাবি, এই পরিবর্তনগুলো “ভাঙা ভাতা ব্যবস্থা” সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এমপিদের অনেকেই এই পরিবর্তনকে শুধুই বাজেট কাটছাঁট হিসেবে দেখছেন বলে জানা যায়।

হাউস অব কমন্সের ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস সিলেক্ট কমিটির লেবার চেয়ার ডেবি আব্রাহামস বলেন, এই কাটছাঁট যুক্তরাজ্যের দরিদ্রতম পরিবারগুলোর মধ্যে আরও অসুস্থতা সৃষ্টি করবে এবং প্রতিবন্ধীদের চাকরির বাজার থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেবে।

তিনি বলেন, “আমি আমার এলাকার এক নারীর সঙ্গে দেখা করি, যার মেয়ের মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রয়েছে এবং সে নিজে রান্না করতে পারে না। নারী নিজে উদ্বিগ্ন ছিলেন তার মেয়ে পার্সোনাল ইন্ডিপেনডেন্স পেমেন্ট হারাতে পারে। এটা অনেক উদ্বেগ তৈরি করছে।”

আব্রাহামস সরকারকে পরিবর্তন স্থগিত করে পার্সোনাল ইন্ডিপেনডেন্স পেমেন্ট-এর যোগ্যতা সম্পর্কিত পরিবর্তনের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনার আহ্বান জানান। যদিও মন্ত্রীরা বলছেন এটি পরামর্শ বা আলোচনার বিষয় নয়।

ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস কমিটি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি “ডিসএবিলিটি কাটস মিনি-ইনকোয়ারি” চালাবে বলে জানা যায়। যেখানে ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার্ক ও পেনশন বিভাগে মন্ত্রীদের সাক্ষ্য দিতে ডাকা হবে। এতে দাবি-কারীদের স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্যের উপর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে।

আব্রাহামস বলেন, “ লেবার পার্টির মধ্যে নতুন কর্তন আইনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার্ক ও পেনশন বিভাগে মন্ত্রীরা এখন মনোযোগ দিয়ে শুনছেন, তবে এই সমস্যা সহজে দূর হবে না।”

ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার্ক ও পেনশন বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন: “আমাদের ভাতা ব্যবস্থা সংস্কার করতেই হবে যাতে এটি করদাতাদের জন্য আরও ন্যায্য হয়, কর্মক্ষমদের কাজ খুঁজে পেতে সহায়তা করে এবং যারা কাজ করতে পারেন না তাদের সুরক্ষা দেয়।”

তিনি আরও বলেন: “আমাদের পদ্ধতি বা সিস্টেমের ভিত্তি হবে মানুষকে মর্যাদা ও সম্মানের সাথে আচরণ করা। তাই আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালিয়ে যাব এবং যারা কখনই কাজ করতে পারবেন না তাদের আয় রক্ষা করব।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৯ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের সামরিক ঘাঁটিতে রাখা আশ্রয়প্রার্থীদের চিকিৎসায় এমএসএফ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে শঙ্কার মুখে পড়তে পারে ফ্যাশন ডিজাইন শিল্প

অফকমের তদন্তে বাধা দিলে জেল হতে পারে টেক প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের