ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় (এনএইচএস) বিশ বছরের বেশি সময় ধরে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত ধরা পড়ে যান। তদন্তে দেখা যায়, ওই নারী চিকিৎসকের সনদ ভুয়া। ভুয়া সনদে চাকরি বাগানোর কারণে এত দিন ভোগ করা সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাবদ ৪ লাখ পাউন্ডের বেশি অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে বেশি সময় কারা ভোগ করতে হবে ওই নারীকে।
ঝোলিয়া আলেমি নামে ওই ভুয়া চিকিৎসক বার্নলির বাসিন্দা। নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের নামে ভুয়া ডিগ্রি সনদ ব্যবহার করে সরকারি চাকরি বাগিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেছেন তিনি।
শুরুতে ৬২ বছর বয়সী এই নারী জালিয়াতিসহ ২০টি অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালে ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টের জুরি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। ওই সময় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস)-এর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, একজন বিচারক ওই নারীকে এনএইচএস-কে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪ লাখ ৬ হাজার ৬২৪ পাউন্ড ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অথবা ‘জনগণের তহবিল তছরুপ’ করার অপরাধে তাকে আড়াই বছর জেলে থাকতে হবে।
আলেমি ইরানি বংশোদ্ভূত। সেখানেই তার জন্ম। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে তিনি অকল্যান্ডে ছিলেন। সেখানে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি ডিগ্রি অর্জন করতে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি।
আদালতকে জানানো হয়েছে, আলেমি ১৯৯৫ সালে ভুয়া ডিগ্রি সনদ এবং অন্যান্য নথিপত্র তৈরি করেন। কিন্তু যাচাইকরণপত্র তৈরি করতে গিয়ে তিনি ভুল করেছিলেন, সেখানে ‘যাচাই’ (verify) শব্দটির বানান ভুল হয়েছিল! তা সত্ত্বেও, জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল (জিএমসি) তাকে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন দেয়।
মামলার শুনানির তথ্য অনুযায়ী, আলেমি এনএইচএস থেকে ১৩ লাখ পাউন্ডের বেশি বেতন পেয়েছেন। কিন্তু এই পদগুলোতে কাজ করার জন্য তার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল না।
আদালতের নথি অনুযায়ী, এর আগে আলেমিকে ২০১৮ সালে তিনটি জালিয়াতির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সেই অপরাধগুলো ৮৪ বছর বয়সী এক নারীর উইল জালিয়াতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এই জালিয়াতি ধরা না পড়লে আলেমি ওই নারীর একটি বাংলো এবং ৩ লাখ পাউন্ডের উত্তরাধিকারী হতেন।
২০১৮ সালে আলেমি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, জিএমসি ১৯৯০-এর দশকে তাদের ‘অপর্যাপ্ত’ যাচাইয়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। এরপরই তারা যুক্তরাজ্যে কর্মরত প্রায় ৩ হাজার বিদেশি চিকিৎসকের সনদপত্র জরুরিভিত্তিতে যাচাই শুরু করে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১১ জুন ২০২৫