TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ভুল ট্রাভেল ডেটার কারণে ২৩,৫০০ পরিবারের চাইল্ড বেনিফিট বন্ধ

যুক্তরাজ্যের ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ এইচএম রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস (HMRC) ভুল ট্রাভেল তথ্যের কারণে ২৩,৫০০ পরিবারের চাইল্ড বেনিফিট স্থগিত করার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। সংস্থাটি পরে স্বীকার করেছে যে সীমান্ত ডেটা অসম্পূর্ণ থাকায় বিপুল সংখ্যক পরিবারকে ভুলভাবে “দেশত্যাগী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের চাইল্ড বেনিফিট বন্ধ করা হয়েছিল।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গার্ডিয়ান ও দ্য ডিটেইল-এর যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর, যেখানে উত্তর আয়ারল্যান্ডের শত শত পরিবারের চাইল্ড বেনিফিট বন্ধের অভিযোগ প্রকাশ পায়। এসব পরিবার ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরার সময় ডাবলিন বিমানবন্দর ব্যবহার করেছিল, যার ফলে HMRC সিস্টেমে তাদের তথ্য “একমুখী ফ্লাইটে দেশত্যাগ” হিসেবে রেকর্ড হয়।

এরপর জানা যায়, ৬.৯ মিলিয়ন বেনিফিট গ্রাহকের মধ্যে ২৩,৪৮৯ জনকে HMRC সন্দেহের তালিকায় রেখে বসবাসের প্রমাণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন লিভারপুলের সঙ্গীত শিক্ষিকা সেরিস, যিনি অটিজমে আক্রান্ত দুই সন্তানকে নিয়ে একদিনের জন্য আমস্টারডাম সফর করেছিলেন। তিনি বলেন,

“আমাদের পুরো পরিবার একই দিনে ফিরে এসেছে, তারপরও এখন আমাকে প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে আমি নাকি আমস্টারডামে থাকছি।”

সেরিস জানান, এখন তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্কুল ও জিপির রেকর্ডসহ নানা নথি দিতে হচ্ছে শুধু প্রমাণ করার জন্য যে তিনি যুক্তরাজ্যে বাস করছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

“এমন মনে হচ্ছে যেন ছুটি কাটাতে গেলেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।”

নর্দান আয়ারল্যান্ডের টেসকো কর্মী সাইমন পিলব্রোও একই ভোগান্তির শিকার। পাঁচ দিনের ভিয়েনা সফরের পর তার চাইল্ড বেনিফিট বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন,

“আমি টেসকোতে কাজ করি—যা অস্ট্রিয়া থেকে করা সম্ভব নয়। তারপরও প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে আমি নিজের দেশেই থাকি!”

একইভাবে থিয়েটার টেকনিশিয়ান মার্ক ব্ল্যাকমোর বলেন, “HMRC আমার বেনিফিট বন্ধ করেছে, অথচ তারা চিঠি পাঠিয়েছে আমার ইংল্যান্ডের ঠিকানায়—যা স্পষ্ট প্রমাণ আমি এখানেই আছি।” তিনি মজার ছলে সংস্থাকে “সময় নষ্টের ক্ষতিপূরণ” বাবদ একটি ইনভয়েসও পাঠিয়েছেন।

ডারহামের এক দম্পতি ম্যাট ও জুডি, যারা দুই অটিস্টিক ছেলের অভিভাবক, ফ্রান্স সফরের পর একই পরিস্থিতির শিকার হন। তাদের বেনিফিটও ৬ অক্টোবর বন্ধ করা হয়। তারা বলেন,

“সরকারের কেউ হয়তো ভেবেছেন—যারা একমুখী টিকিটে গেছেন, তারা ফিরে এসেছে কি না দেখি। কিন্তু তারা যাচাই করেননি, আমরা ফিরেছি কি না!”

এইচএমআরসি এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে, “যদিও এটি খুব অল্পসংখ্যক চাইল্ড বেনিফিট গ্রাহকের ক্ষেত্রে ঘটেছে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যাদের ভুলভাবে পেমেন্ট বন্ধ হয়েছে, তারা দ্রুত যোগাযোগ করলে পেমেন্ট পুনরায় চালু করা হবে।” সংস্থাটি জানায়, ভবিষ্যতে চাকরির তথ্য আগে যাচাই করে তবেই বেনিফিট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সরকার গত আগস্টে এই অভিযান শুরু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল বেনিফিট জালিয়াতি রোধে বছরে £৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয়। ক্যাবিনেট অফিস মন্ত্রী জর্জিয়া গুল্ড জানান, “সেপ্টেম্বর থেকে আমরা দশগুণ বেশি তদন্তকারী নিয়োগ করছি, যা করদাতাদের শত শত মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করবে।”

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের বাইরে টানা আট সপ্তাহের বেশি থাকলে চাইল্ড বেনিফিট বন্ধ হতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সীমান্ত-তথ্য অসম্পূর্ণ ও ভুল হওয়ায় হাজারো পরিবার অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

লাইসেন্স ছাড়াই মাছ ধরায় পরিবেশ সংস্থার কাছে নিজেকে রিপোর্ট করলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে ইউরোপের মধ্যে এগিয়ে যুক্তরাজ্য

ইউরো জিতলে ছুটির দাবিতে চাপের মুখে বরিস জনসন

অনলাইন ডেস্ক