ব্রিটেনের রাজনীতিতে আলোচিত রিফর্ম ইউকে দলের অন্তত ১২ জন নবনির্বাচিত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কট্টর ডানপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য শেয়ার করার অভিযোগ উঠেছে।
এই কাউন্সিলররা তিনটি ভিন্ন কাউন্টি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘ব্রিটেন ফার্স্ট’ নামক উগ্র-ডানপন্থী দলের কনটেন্ট সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন, যা দলটি উস্কানিমূলক মিছিল ও কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে রিফর্ম ইউকে ১,৬০০টির বেশি আসনের মধ্যে ৬৭৭টি আসনে জয়লাভ করে। তবে এ সাফল্যের এক সপ্তাহের মধ্যেই দলটির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অতীত কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে, বিশেষ করে দলটি নির্বাচনের সময় এসব অভিযোগকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন:
*পল হ্যারিসন, লেসেস্টারশায়ার কাউন্টি কাউন্সিলের সদস্য, যিনি ব্রিটেন ফার্স্টের এক্স (টুইটার) পোস্টে “ম্যাস ডিপোর্টেশন” নিয়ে করা প্রশ্নে “হ্যাঁ” মন্তব্য করে সায় দিয়েছিলেন। সেই পোস্টে মুসলিম পুরুষদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ছবি ও পাকিস্তানি পতাকা ছিল।
*রাসেল চেরি, থারক কাউন্সিলর, যিনি ব্রিটেন ফার্স্টের নেতা পল গোল্ডিংয়ের একটি পোস্ট রিটুইট করেন। গোল্ডিং ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হয়রানির দায়ে দণ্ডিত।
*ইভান ড্যাবস, ওয়েস্ট নরথহ্যাম্পটনশায়ারের কাউন্সিলর, যিনি ব্রিটেন ফার্স্ট ও গোল্ডিংয়ের পোস্ট শেয়ার করেছেন, যার মধ্যে একটি ছিল রাস্তায় বিক্ষোভের আহ্বান।
রিফর্ম ইউকে তাদের প্রার্থী যাচাইয়ে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করেছিল তা হচ্ছে Ferretly, একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই প্ল্যাটফর্ম। সফটওয়্যারটি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, উসকানিমূলক আচরণ এবং চরমপন্থী সংশ্লিষ্টতা শনাক্ত করে।
তবে, দলটির নেতা নাইজেল ফারাজ দাবি করেছিলেন, তাদের দল “সবচেয়ে গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা প্রার্থী তালিকা” করেছে। তিনি টাইমস রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তারা অভ্যন্তরীণভাবে “এআই এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করে” এই যাচাই করেছেন।
অন্যদিকে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি এআই সফটওয়্যারের ওপর এতটা নির্ভর করে না। উদাহরণস্বরূপ, কনজারভেটিভ পার্টি ৩০ সদস্যের একটি দল দিয়ে প্রতিটি প্রার্থী যাচাই করে।
এরই মধ্যে রিফর্ম ইউকে দল অন্তত তিনজন নির্বাচিত কাউন্সিলরকে হারিয়েছে:
*ডোনা এডমন্ডস (শ্রপশায়ার), যিনি বুধবার দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বরখাস্ত হন। তিনি বলেন, নাইজাল ফারাজ দলের সদস্যদের অবজ্ঞা করেন।
*লুক শিংলার (ওয়ারউইকশায়ার), যিনি জানিয়েছেন তিনি “আগামী ১৮ মাস” স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে কাজ করবেন কারণ তিনি রয়েল এয়ার ফোর্সে কর্মরত।
*ডেসমন্ড ক্লার্ক (নটিংহ্যামশায়ার), যিনি পদত্যাগ করেছেন, ফলে সেখানে উপনির্বাচনের প্রয়োজন হবে।
এইসব বিতর্কিত পোস্ট প্রথমে প্রকাশ্যে আনে Hope Not Hate নামক একটি চরমপন্থা-বিরোধী সংস্থা। সংস্থাটির ক্যাম্পেইন পরিচালক জর্জি ল্যামিং বলেন, “নাইজেল ফারাজ দাবি করেছেন যে তাদের দলের ভেটিং পদ্ধতি সবচেয়ে উন্নত। কিন্তু আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, বাস্তবে তা খুবই দুর্বল।”
তিনি আরও বলেন, “রিফর্ম ইউকে তাদের প্রার্থীদের অনলাইন আচরণের দায় এড়িয়ে চলেছে এবং এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযুক্ত প্রার্থীকে দল থেকে সরায়নি।”
Hope Not Hate আরও দাবি করেছে, কিছু রিফর্ম প্রার্থী— যারা এখন নির্বাচিত হয়েছেন— তারা মুসলিমবিদ্বেষ, জলবায়ু পরিবর্তনকে “গ্লোবালিস্ট ষড়যন্ত্র” আখ্যা দেওয়া, টমি রবিনসনের প্রশংসা এবং হলোকাস্ট-অস্বীকারকারী ডেভিড আরভিংয়ের কনটেন্ট শেয়ার করেছিলেন।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ মে ২০২৫