যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে রিফর্ম ইউকে দল, এবার দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং নেতৃত্বের সংকটের কারণে। দলের চেয়ারম্যান জিয়া ইউসুফ একটি বিতর্কিত ঘটনার পর হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন, যা দলটির জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর সময়ে এসেছে।
রানকর্নের নবনির্বাচিত এমপি সারা পোচিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী বরাবর যুক্তরাজ্যে নারীদের বোরকা পরা আইনগত কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় জিয়া ইউসুফ তাকে “বোকা” বলে অভিহিত করেন। এই মন্তব্য ঘিরে দল ও জনমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউসুফ ঘোষণা দেন যে তিনি রিফর্ম ইউকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, “ ১১ মাস আগে আমি রিফর্ম ইউকের চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পূর্ণ সময় দিয়ে কাজ করেছি, দলকে ১৪% থেকে ৩০% জনপ্রিয়তায় নিয়ে গেছি, সদস্য সংখ্যা চার গুণ বাড়িয়েছি এবং ঐতিহাসিক নির্বাচনী ফলাফল এনে দিয়েছি।
এখন আমি মনে করি না রিফর্ম ইউকের সরকার গঠনের প্রচেষ্টায় আমার সময় ব্যয় করা অর্থবহ হবে। তাই আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এসেছে যখন দল স্কটল্যান্ডের হ্যামিলটনের উপ-নির্বাচনে সাফল্য পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
সারা পোচিনের সঙ্গে এই বিরোধ রিফর্ম ইউকের মধ্যে চলমান ভাঙনের পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। উল্লেখ্য, ডিসেম্বরে জিয়া ইউসুফের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এমপি রুপার্ট লোউ দল ছাড়েন। বর্তমানে তিনি ইউসুফের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে সাবেক ডেপুটি লিডার বেন হাবিব ও লন্ডনের মেয়র পদপ্রার্থী হাওয়ার্ড কক্সসহ আরও কয়েকজন নেতাকর্মী ইউসুফকে দল থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
তবে মে মাসের স্থানীয় নির্বাচনে রিফর্ম ইউকের বিশাল অগ্রগতির কৃতিত্ব ইউসুফের দল গঠনের কৌশলেই দিয়েছেন ফারাজ।
ইউসুফের পদত্যাগের পর ফারাজ এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন, “ আমি সত্যিই দুঃখিত যে জিয়া ইউসুফ রিফর্ম ইউকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়ছেন। মাত্র গত সপ্তাহেই বলেছিলাম, ১ মে’র নির্বাচনে তার অবদান বিশাল। তিনি অত্যন্ত প্রতিভাবান। রাজনীতি চাপযুক্ত এবং কঠিন খেলা — জিয়া সম্ভবত বিরক্ত হয়ে পড়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইউসুফকে মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দলের একটি বাজেট পর্যবেক্ষণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যা মূলত তার প্রভাব কমিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, ইউসুফ অনেক আগেই নেতৃত্বের মূল কেন্দ্রবিন্দু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
এদিকে রিফর্ম ইউকে-র অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলো কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। কেউ কেউ দাবি করছেন, একজন চেয়ারম্যান নিজেই যদি মনে করেন দলটিকে সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত করা সময়ের অপচয়, তাহলে সাধারণ ভোটারের সেই দলে আস্থা রাখা কঠিন। ব্রেক্সিট আন্দোলনের পুরনো মিত্র অ্যান্ডি উইগমোর এবং অ্যারন ব্যাংসকে এখন নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি দলটিকে নির্বাচনী দৌড়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না-ই বা, অন্তত দলীয় শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। ফারাজের নেতৃত্বে বহু নেতার দল ছাড়ার ইতিহাসের মধ্যে ইউসুফের এই বিদায় নতুন মাত্রা যোগ করলো।
এই সংকট আরও একবার প্রমাণ করল—নতুন দল হিসেবে রিফর্ম ইউকে এখনও নিজস্ব আদর্শ, নেতৃত্ব কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্নে একক অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। এর ফলে দলের সামনে রাজনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি সাংগঠনিক স্থিতিশীলতাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
এম.কে
০৬ জুন ২০২৫