যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড শহরে সন্তানের সামনে মা কুলসুমা আক্তার শিউলীকে হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশি হাবিবুর রহমান মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশ।
গত শনিবার পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হয়েছিলেন শিউলী। সে সময় শিশুর সামনেই শিউলীকে (২৭) ছুরিকাঘাত করেন মাসুম। এতে শিউলী মারা যান। তবে শিশুটির কিছু হয়নি। প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরি মেরে হত্যার পর থেকে ওল্ডহামের বাসিন্দা মাসুম পলাতক ছিলেন। তাকে খুঁজে বের করতে বড় ধরনের অভিযান চালায় পুলিশ।
পরে ব্রাডফোর্ড থেকে ১৮০ মাইল দূরের অ্যালিসবারি থেকে মঙ্গলবার সকালের দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। মাসুমই ওই শিশুসন্তানের বাবা বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
মাসুম বাংলাদেশের সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন স্টুডেন্ট ভিসায়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রাডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে মাস্টার্স করেন তিনি।
ডেইলি মেইল পত্রিকা জানিয়েছে, শিউলী আক্তারকে আক্রমণ করা এবং হত্যার হুমকি দেওয়ায় গত নভেম্বর মাসে একবার মাসুমকে ম্যানচেস্টারের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তবে সে যাত্রায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।
নভেম্বরে আদালতের শুনানিতে মাসুম তার বিরুদ্ধে আনা দুটো অভিযোগেই দোষ অস্বীকার করেছিলেন। আদালত সে সময় তাকে শিউলী আক্তারসহ আরও একজন আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা এবং ওল্ডহামের একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় না যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এ শর্তেই তাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।
মাসুমকে খুঁজে বের করতে বার্নলে, ওল্ডহাম এবং চেস্টারে একাধিক অভিযান চালাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এইসব অভিযান চালাতে গিয়ে অপরাধীকে সহায়তা করার সন্দেহে পুলিশ ২৩ বছরের এক ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করেছে।
মাসুমকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়ে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশের হোমিসাইড অ্যান্ড মেজর ইনকোয়ারি টিম- এর ডিটেকটিভ চিফ ইন্সপেক্টর স্ট্যাসি আতকিনসন বলেছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতিতে একজন মা তার জীবন হারিয়েছেন। এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে এ ঘটনায় যথেষ্ট উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তাদেরকে আশ্বস্ত করতে স্থানীয় পুলিশ টিম এলাকা পাহারা দিচ্ছে।
ব্রাডফোর্ডে খুনের ঘটনাটি যেখানে ঘটেছিল, সেই জায়গার একটি ফল ও সবজির দোকানের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শিউলি আক্তার খুনের দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।
সেই ফুটেজে দেখা গেছে কীভাবে দুইজনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ কথাবার্তা ভয়াবহ এক হামলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শী এক পথচারী দ্য সান পত্রিকাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “তিনি (মাসুম) কেবল তার ছেলেকে দেখতে চাইছিলেন। তিনি ওল্ডহাম থেকে ব্রাডফোর্ড ইন্টারচেঞ্জ বাসে উঠেছিলেন। তারপর সেখানে একটি ট্যাক্সি নেন। তিনি সন্তান এবং তার মায়ের সঙ্গে শহর থেকে ওয়েস্টগেটে হেঁটে যান।
“তারা দোকানের বাইরে ৫ মিনিট ধরে কথা বলছিলেন। তিনি তার ছেলেকে কেড়ে নেননি বা এরকম কিছুই করেননি। তিনি কেবল ছেলেকে দেখতে চাইছিলেন।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সন্তানের মা কে ঘাড়ে চার থেকে পাঁচবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। মা সে সময় এক বান্ধবীকে নিয়ে শপিং করছিলেন। শিশুটির ক্ষতি হয়নি।
দোকানের মালিক জিও খান (৬৯) বলেন, তিনি শিউলী আক্তারকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। শিউলী তার দোকানের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন।
জিও খান জানান, শনিবার বিকালে তিনি কাজ করছিলেন। হঠাৎ ওয়েস্টগেটের অপরপাশে চিৎকার শুনে দোকান থেকে দৌড়ে বেরোন। গিয়েই রক্তাক্ত আক্তারকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি।
খান বলেন, “আমি তার নাড়ি পরীক্ষা করেছিলাম, কিন্তু পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি তার ঘাড়ে ছুরির ক্ষত দেখি। এ সময় একজন চিকিৎসক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু তিনিও এসে দেখেন পালস নেই। তিনি,আমি এবং আরেকজন মিলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে সেই নারী আর বেঁচে ছিলেন না।”
সূত্রঃ ডেইলি মেইল
এম.কে
১২ এপ্রিল ২০২৪