ইংল্যান্ডে এশীয় নারীরা সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় সবচেয়ে গুরুতর ধরনের প্রসবজনিত ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে প্রায় দ্বিগুণ অবস্থায় রয়েছেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে এনএইচএসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের তুলনায় এশীয় নারীদের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডিগ্রির ছিঁড়ে যাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হলেও অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই বাড়তি ঝুঁকি সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্তভাবে অবগত নন।
তৃতীয় ও চতুর্থ ডিগ্রির এই আঘাতকে চিকিৎসা পরিভাষায় অবস্টেট্রিক অ্যানাল স্পিঙ্কটার ইনজুরি (OASI) বলা হয়। প্রসবের সময় প্রায় ৯০ শতাংশ নারী কোনো না কোনো মাত্রার ছিঁড়ে যাওয়ার শিকার হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো দ্রুত সেরে যায়। তবে তৃতীয় ডিগ্রির ক্ষেত্রে পায়ুপথ নিয়ন্ত্রণকারী পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চতুর্থ ডিগ্রির আঘাত পায়ুপথের ভেতরের আবরণ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
গার্ডিয়ানের তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে পাওয়া এনএইচএস ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩–২৪ সালে প্রতি এক লাখ প্রসবে এশীয় নারীদের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডিগ্রির ছিঁড়ে যাওয়ার হার ছিল ২,৮৩১।
একই সময়ে শ্বেতাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১,৪৭৩ এবং কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে ১,৪৯৬।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আঘাত নারীদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে অন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক জটিলতা অন্তর্ভুক্ত, যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।
আইন প্রতিষ্ঠান ইরউইন মিচেলের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট এবং MASIC ফাউন্ডেশনের পক্ষে কাজ করা গীতা নায়ার বলেন, এশীয় নারীদের ঝুঁকি বেশি হওয়ার কারণ একাধিক। শারীরবৃত্তীয় ও অ্যানাটমিক পার্থক্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেতরের কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতাও এতে ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।
রয়্যাল কলেজ অব মিডওয়াইভসের নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা লিয়া ব্রিগান্তে জানান, পশ্চিমা দেশগুলোতে করা একাধিক গবেষণায় এশীয় নারীদের মধ্যে পেরিনিয়াল ট্রমার ঝুঁকি বেশি পাওয়া গেলেও সেই তথ্য নিয়মিতভাবে সামনের সারির মিডওয়াইফ ও চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অনেক নারী জানিয়েছেন, প্রসবের সময় দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বা মিডওয়াইফ তাদের বাড়তি ঝুঁকির বিষয়টি জানতেন না।
ব্রিগান্তের মতে, এই বৈষম্যের পেছনের কারণ এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। যন্ত্র সহায়তায় প্রসবের হার, পুষ্টিগত অবস্থা, সেবার মানের পার্থক্য এবং প্রসবকালে নারীদের প্রয়োজন কতটা গুরুত্ব পায়—এসব বিষয় এতে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কেন এশীয় নারীদের ঝুঁকি এত বেশি, তা ব্যাখ্যা করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ এখনো নেই।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে গীতা নায়ার বলেন, সন্তানের জন্মের সময় তার তৃতীয় ডিগ্রির ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, যা তাকে স্থায়ী শারীরিক সমস্যার মুখে ফেলেছে। তিনি মনে করেন, গর্ভকালেই নারীদের ব্যক্তিগত ঝুঁকি সম্পর্কে পরিষ্কার ও সাংস্কৃতিকভাবে উপযোগী ভাষায় জানানো জরুরি, যাতে তারা আগেভাগে প্রস্তুত থাকতে পারেন।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন আগের গবেষণায় দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে তৃতীয় ও চতুর্থ ডিগ্রির পেরিনিয়াল ছিঁড়ে যাওয়ার হার ২০২০ সালের জুনে প্রতি হাজারে ২৫ থেকে বেড়ে চলতি বছরের জুনে প্রতি হাজারে ২৯-এ পৌঁছেছে, যা প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
MASIC-এর প্রধান নির্বাহী ক্লোই অলিভার বলেন, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হওয়া OASI-এর একটি বড় ঝুঁকি হলেও, ফোর্সেপস দিয়ে প্রসব, বড় শিশুর জন্ম বা বেশি মাতৃত্বকালীন বয়সের মতো ঝুঁকির সঙ্গে এটিও গর্ভকালীন পরামর্শে নিয়মিতভাবে আলোচিত হয় না। ফলে অনেক নারী নিজের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতেই পারেন না।
এনএইচএস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রত্যেক নারী নিরাপদ, মানসম্মত ও সমতাভিত্তিক মাতৃত্বসেবা পাওয়ার অধিকারী। এশীয় নারীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে এবং গর্ভাবস্থা থেকে প্রসবোত্তর সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

