লেবার সরকার এক যুগান্তকারী নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে সরকারি প্রকল্পে দরপত্র পেতে হলে দেশে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখতে হবে। সড়ক, হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ১০ বছরে প্রায় £৭২৫ বিলিয়ন ব্যয় করতে যাচ্ছে সরকার, যার সুফল জনগণের ঘরে পৌঁছে দিতে এ নীতির বাস্তবায়ন।
চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস এই ব্যয়কে অভিহিত করেছেন “ব্রিটেনের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ” হিসেবে। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। আগের সরকারগুলো যে অবহেলা দেখিয়েছে, আমরা তা বদলাতে চাই।”
সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ীঃ
*যেসব কোম্পানি সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে চায়, তাদেরকে স্থানীয় কর্মসংস্থান, শিক্ষানবিশ কর্মসূচি ও দক্ষতা উন্নয়ন পরিকল্পনা দেখাতে হবে।
*দরপত্র মূল্যায়নে ‘ব্রিটিশ চাকুরির সুযোগ তৈরির’ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
*কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত মনিটর করবে সরকারি সংস্থাগুলো।
প্যাট ম্যাকফ্যাডেন, ক্যাবিনেট অফিস মন্ত্রী, বলেন, “আমরা চাচ্ছি সরকারি বিনিয়োগের প্রত্যক্ষ সুফল যেন ব্রিটিশ জনগণ পায়। এই নতুন পরিকল্পনা দেশজুড়ে চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।”
এই উদ্যোগ মূলত উত্তর ইংল্যান্ড ও পুরনো শিল্পনির্ভর এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে নেওয়া হচ্ছে, যেগুলো একসময় বঞ্চিত ছিলো উন্নয়ন থেকে। এমন এক সময়ে এই ঘোষণা এলো, যখন নাইজেল ফারাজের রিফর্ম পার্টি শ্রমবাজার ও শিল্প পুনরুজ্জীবনে বামঘেঁষা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে চাপ সৃষ্টি করছে।
তবে, কনজারভেটিভ দলের শ্যাডো চ্যান্সেলর স্যার মেল স্ট্রাইড কড়া সমালোচনা করে বলেন, “র্যাচেল রিভস বাজেটের ব্যয় সীমা না মেনে দেশের অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। অতিরিক্ত ঋণ আর করের বোঝা সাধারণ জনগণের ওপর পড়বে।”
সরকার অবশ্য আশাবাদী, এই নতুন কৌশলের মাধ্যমে কেবল অবকাঠামোই নয়, দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে এবং নাগরিকদের কর্মজীবন নিরাপদ হবে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গঠিত হচ্ছে National Infrastructure and Service Transformation Authority, যারা নিশ্চিত করবে — সব কাজ সময়মতো এবং বাজেট অনুযায়ী সম্পন্ন হচ্ছে কিনা।
এই সাহসী উদ্যোগ ব্রিটেনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন আনে, তা সময়ই বলে দেবে বলে মত দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে এতটুকু নিশ্চিত — ব্রিটিশ চাকুরির বাজারের জন্য এটি একটি বড় বিজয়।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
১৫ জুন ২০২৫