যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করা চীনা শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের ওপর নজরদারি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা সরকার যেসব বিষয়ে সংবেদনশীল, সেসব আলোচনাকে দমন করতেই এ ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য-চীন ট্রান্সপারেন্সি (ইউকেসিটি) নামের একটি থিঙ্ক ট্যাংকের জরিপে চীনভিত্তিক গবেষণা সংশ্লিষ্ট একাডেমিকদের মতামত তুলে ধরে বলা হয়, চীনা কর্মকর্তারা অনেক সময় শিক্ষক ও গবেষকদের নির্দিষ্ট বিষয় এড়িয়ে চলতে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সতর্ক করছেন।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েকদিন আগেই যুক্তরাজ্যে একটি নতুন আইন কার্যকর হয়েছে, যার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এই আইন লঙ্ঘন করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাখ লাখ পাউন্ড জরিমানা গুণতে হতে পারে।
চীনের লন্ডন দূতাবাস এ প্রতিবেদনে থাকা অভিযোগগুলোকে “ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক” বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, “চীন সর্বদা যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে।”
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চীনের হস্তক্ষেপের বিষয়ে সচেতন হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ, কারণ তারা চীনা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-এর ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল।
অনেক একাডেমিক অভিযোগ করেছেন, যারা চীনের সংবেদনশীল বিষয়ের ওপর গবেষণা করেন, তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, এমনকি চীনে থাকা পরিবারের সদস্যদের হয়রানি বা হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে।
এই সংবেদনশীল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—জিনজিয়াং প্রদেশে কথিত জাতিগত নিধন, কোভিড-১৯ এর উৎস, এবং চীনা প্রযুক্তি কোম্পানির উত্থান।
অভিযোগ রয়েছে, যুক্তরাজ্যের কিছু কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট—যা যুক্তরাজ্য-চীন শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়—সেখানে চীনা কর্মকর্তারাই শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হন। এই ইনস্টিটিউটগুলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার অভিযোগে বহুবার সমালোচিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের শিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা, অফিস ফর স্টুডেন্টস, জানিয়েছে তারা এসব ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম নতুন আইন অনুযায়ী খতিয়ে দেখবে। ইতোমধ্যে একটি শক্তিশালী অভিযোগ ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী বা অতিথি বক্তারা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন।
ইউকেসিটি জানায়, তাদের জরিপে কিছু শিক্ষক বলেছেন, চীনা শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে, তারা চীনা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সহপাঠীদের ওপর নজর রাখার অনুরোধ পেয়েছেন।
এছাড়াও অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চীন সরকারের জন্য সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করতে তারা অস্বস্তি বোধ করেন এবং এসব বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহ হারাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের স্কিলস মন্ত্রী জ্যাকি স্মিথ বলেন, “যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যে কাউকে ভয় দেখায়, হয়রানি করে বা ক্ষতি করে, তা কখনও সহ্য করা হবে না।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১২ আগস্ট ২০২৫