ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য সংস্থা অভিযোগ করেছে, স্ট্রোক রোগীদের সঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে এনএইচএস। এই ব্যর্থতার ফলে রোগীদের মৃত্যু, পক্ষাঘাত ও দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ১.২ কোটির বেশি মানুষ প্রথমবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং ৬৫ লাখ মানুষ মারা যান। যুক্তরাজ্যে স্ট্রোক বছরে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ, যা দেশের অন্যতম প্রধান ঘাতক রোগ হিসেবে বিবেচিত। এটি গুরুতর অক্ষমতার একক প্রধান কারণও বটে।
এনএইচএস ‘ফাস্ট’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনগণকে স্ট্রোকের মূল উপসর্গ—মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত দুর্বল হওয়া ও জড়িয়ে যাওয়া কথা—সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা চালালেও বাস্তবে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মারাত্মক ঘাটতি রয়ে গেছে। স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর মাত্র ৪৬.৬ শতাংশ রোগীকেই চার ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞ স্ট্রোক ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ওম্বাডসম্যান দপ্তর জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে স্ট্রোক চিকিৎসায় ব্যর্থতা সংক্রান্ত তদন্ত ৬৫ শতাংশ বেড়ে ১৭ থেকে ২৮টিতে পৌঁছেছে। একই সময়ে মোট অভিযোগ বেড়েছে ৩১৮ থেকে ৩৯৬-এ। রোগ নির্ণয়, নার্সিং, চিকিৎসা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ব্যর্থতাগুলোর পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা গেছে।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী রেবেকা হিলসেনরাথ বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই ভুলগুলো সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা ক্লিনিক নিজেরা শনাক্তই করতে পারেনি। দ্রুত ও নির্ভুল রোগ নির্ণয় ছাড়া স্ট্রোক রোগীদের সঠিক চিকিৎসা অসম্ভব, যা বর্তমানে এনএইচএসে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী জুলিয়েট বোভেরি বলেছেন, সেবাদানকারী অনেক পেশাজীবী আন্তরিকভাবে কাজ করলেও জরুরি বিনিয়োগ ও জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত হৃদরোগ পরিকল্পনা না থাকলে এই ব্যর্থতা চলতেই থাকবে।
ন্যাশনাল স্ট্রোক অডিটের পরিচালক প্রফেসর মার্টিন জেমস বলেন, সময়মতো রোগীকে বিশেষজ্ঞ ইউনিটে নেওয়া না হলে জটিলতা ও স্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অথচ হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত সক্ষমতা না থাকায় অধিকাংশ রোগী সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, সব হাসপাতালের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত — রোগীকে চার ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোক ইউনিটে স্থানান্তরের নিশ্চয়তা। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০১ জুলাই ২০২৫