11.9 C
London
June 6, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসে নতুন বাধাঃ ১০ বছর অপেক্ষার পথে ১৫ লাখ বিদেশি কর্মী

২০২০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে আসা প্রায় ১৫ লাখ বিদেশি কর্মীকে স্থায়ী বসবাসের (পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট) জন্য আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে—এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেবার পার্টির এমপিরা।

সরকারি ইমিগ্রেশন হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী বসবাস ও নাগরিকত্বের অধিকার ৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর পর প্রদান করা হবে। তবে, এই পরিবর্তন ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ও আবেদন প্রক্রিয়াধীন অভিবাসীদের ওপর প্রযোজ্য হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

সরকারি সূত্রমতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার এ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করবেন যে, গত পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের জন্যও কি এই পরিবর্তন কার্যকর হবে।

যদি এই পরিবর্তন কার্যকর হয়, তবে এর অর্থ হবে—বর্তমানে যারা চলতি বছরেই স্থায়ী বসবাসের যোগ্য হতেন, তাদের যুক্তরাজ্যে ১০ বছর না থাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

লেবার এমপি ফ্লোরেন্স এসালোমি মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে বলেন, দক্ষিণ লন্ডনের ভক্সহল ও ক্যাম্বারওয়েল গ্রিন এলাকার অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এই অনিশ্চয়তা নিয়ে। “একজন তো আমাকে বলেই ফেললেন, তিনি এতটাই দুশ্চিন্তায় আছেন যে যুক্তরাজ্য ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন, কারণ তার সেটেল স্ট্যাটাস এখন ঝুঁকিতে।”

যদি মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নেন যে ২০২০ সালের আগতদের ওপরও এই নিয়ম কার্যকর হবে, তবে তা কনজারভেটিভদের প্রস্তাবিত ২০২১ সাল থেকে কার্যকারিতার চেয়েও কঠোর হবে।

লেবার দলের একাধিক এমপি এবং বিশ্লেষকেরা হোয়াইট পেপারে কিছু কঠোর পদক্ষেপ এবং কিয়ার স্টারমারের বক্তব্যে ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্টারমার বলেছিলেন, সাম্প্রতিক অভিবাসনের মাত্রা যুক্তরাজ্যে “অপরিমেয় ক্ষতি” করেছে এবং দেশটি যেন “অজানা মানুষের দ্বীপে” পরিণত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে রিফর্ম ইউকে নেতা নাইজেল ফারাজ স্টারমারের বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, “আপনার বক্তৃতা আমি বেশ উপভোগ করেছি—দেখছি আপনি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছেন।”

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করছেন বলে অভিযুক্ত হয়েছেন। যদিও এই অভিযোগকে “নিরর্থক” বলে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এমন একটি দেশ গঠন করতে চাই যেখানে মানুষ প্রতিবেশী ও সম্প্রদায় হিসেবে একসঙ্গে এগিয়ে যাবে, অপরিচিত হিসেবে নয়। আগের সরকার অভিবাসন নীতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার কারণে এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাই আমরা এখন একটি নিয়ন্ত্রিত, নির্বাচনভিত্তিক ও সুবিচারমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছি।”

অন্যদিকে, হোয়াইট পেপারে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রস্তাবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খাতে চলমান আর্থিক সংকট আরও তীব্র করবে বলে সতর্ক করেছেন উপাচার্য ও শিক্ষাখাতের নেতারা।

সাবেক কনজারভেটিভ বিশ্ববিদ্যালয়মন্ত্রী জো জনসন বলেন, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে সরকার নেট মাইগ্রেশন কমানোর চেষ্টা করছে, এটি দুঃখজনক।”

ইংল্যান্ডের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এ গ্রীষ্মে ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে, এমন প্রেক্ষাপটে জনসন বলেন, সরকার প্রস্তাবিত ৬ শতাংশ লেভি (আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আয়ের ওপর) অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। “এটি বিশ্ববিদ্যালয় খাতের আর্থিক কাঠামো দুর্বল করবে এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে।”

কিংস কলেজ লন্ডনের ভাইস-চ্যান্সেলর শিতিজ কাপুর বলেন, “আইনের শব্দগুচ্ছের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা যে ১৫০টি দেশ থেকে শিক্ষার্থী নিয়োগ করি, সেখানে এই পরিবর্তন কেমনভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য কি এখনো ‘স্বাগত জানানোর উপযোগী’ দেশ হিসেবে বিবেচিত?”

ইউডব্লিউই ব্রিস্টলের ভাইস-চ্যান্সেলর স্টিভ ওয়েস্ট বলেন, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপর লেভি প্রয়োগ মানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আরও একটি কর আরোপ। এই লেভির সঙ্গে বিশাল পেনশন ব্যয় এবং ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স বৃদ্ধি যুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অংশের সম্পদ সরকারি কোষাগারে চলে যাবে।

পাশাপাশি, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের দুই বছরের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসাকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার প্রস্তাবও হোয়াইট পেপারে অন্তর্ভুক্ত।

ওয়েস্ট জানান, এতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে। আগের সরকারের কড়াকড়ির কারণে ইতিমধ্যেই ভর্তির হার কমছে, যা আর্থিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।

এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়িত হলে, যুক্তরাজ্যে বিদেশি কর্মী ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠবে বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৫ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

আগামী মাস থেকে ব্রিটিশ পাসপোর্টের ফি বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক

পদত্যাগের ঘোষণায় যা বললেন বরিস জনসন

অনলাইন ডেস্ক

ইউরোপের বৃহত্তম ঈদ উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ওয়েস্টফিল্ডে