যুক্তরাজ্যে শোষণের শিকার হাজার হাজার অভিবাসী কেয়ার কর্মী এখনও চাকরি না পেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সরকার পরিচালিত মিলিয়ন পাউন্ডের চাকরি পুনর্বিন্যাস প্রকল্পের মাধ্যমে এদের নতুন নিয়োগকর্তার সঙ্গে যুক্ত করার কথা থাকলেও বাস্তবে এটি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের প্রকাশিত সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট ২৮,০০০ শোষিত অভিবাসী কর্মীর মধ্যে মাত্র ৩.৪ শতাংশ অর্থাৎ ৯৪১ জন নতুন বৈধ স্পনসরের অধীনে চাকরি খুঁজে পেয়েছেন বলে রিপোর্ট করেছেন। অথচ সামাজিক কেয়ার সেক্টরে এখনো প্রায় ১,৩১,০০০ পদ শূন্য রয়েছে।
ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ডঃ ডোরা-অলিভিয়া ভিকল বলেন, “কোভিড-পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের কেয়ার সেক্টরে কর্মী সংকট দেখা দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে মানুষ সৎ বিশ্বাসে যুক্তরাজ্যে আসেন। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুত চাকুরি তো পাননি, বরং পড়েছেন প্রতারণার ফাঁদে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৭০টি কেয়ার প্রতিষ্ঠানকে অভিবাসী কর্মীদের স্পনসরশিপ লাইসেন্স থেকে বাতিল করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করে প্রতিশ্রুত চাকুরি না দিয়ে, তাদের অনেককে ন্যূনতম মজুরিরও কমে কাজ করতে বাধ্য করে — যা আধুনিক দাসত্ব ও শ্রম আইনের লঙ্ঘন।
ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের নীতিনির্ধারক অ্যাডিস সেহিচ বলেন, “সরকার যখন বিদেশ থেকে কেয়ার কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন যুক্তি ছিল শোষিত ও চাকুরিহীন অভিবাসীদের নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে খুব কম প্রতিষ্ঠান এই কর্মীদের নিতে আগ্রহী, কারণ এর সঙ্গে জড়িত অতিরিক্ত খরচ ও প্রশাসনিক জটিলতা।”
তিনি আরও বলেন, “ফলে একদিকে কর্মীরা রয়েছেন আইনি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায়, অন্যদিকে কেয়ার সেক্টরে শ্রমিক সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। ইংল্যান্ডের অসুস্থ ও প্রবীণদের জন্য এ এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”
সংস্থাটি সরকারের কাছে দাবি করেছে— স্পনসরশিপ ছাড়াই অভিবাসী কর্মীদের কেয়ার সেক্টরে কাজের সুযোগ দিতে হবে এবং শোষক নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকার অবশ্য দাবি করছে, “আন্তর্জাতিক নিয়োগ তহবিলের মাধ্যমে ৯০০ জনেরও বেশি কর্মীকে পুনরায় চাকুরিতে যুক্ত করা হয়েছে এবং হাজার হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।”
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগগুলো যতটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, বাস্তবে তার সুফল ততটা দৃশ্যমান নয়। বরং বিদেশি কেয়ার ভিসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৭ জুন ২০২৫