9.2 C
London
January 16, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে হাসপাতালের করিডোরে চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন রোগীরা

যুক্তরাজ্যে এনএইচএস সম্পর্কে একটি ভয়ঙ্কর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতালে রোগীরা করিডোরে চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন বলে দ্য গার্ডিয়ানও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং জানিয়েছে, লোকজন নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির অভাব এবং এনএইচএস কর্মীরা রোগীদের চাপে অত্যধিক ব্যস্ত।

হাসপাতালের করিডোরে রোগীরা এনএইচএস বা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানা যায়। অন্যদিকে, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের সিপিআর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, কারণ করিডোরে অপেক্ষমাণ মানুষের ভিড়।এনএইচএস-এর বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যজুড়ে এত বেশি রোগী করিডোরে চিকিৎসাধীন থাকছেন যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা ওয়ার্ডের বাইরে বাচ্চা ডেলিভারি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে, ওয়ার্ডের ভিতরে রোগীরা “পশুর মতো অবস্থার” মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়্যাল কলেজ অব নার্সিং (আরসিএন)।

আরসিএন সতর্ক করে বলেছে, রোগীরা নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য কর্মীরা রোগীদের যথাযথ যত্ন নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই।

ইমার্জেন্সি বিভাগের নেতা ড. আদ্রিয়ান বয়েল জানান, নার্সদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের বিবরণ এতটাই ভয়াবহ যে এটি “একটি মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত হওয়া উচিত”। সরকারকে এনএইচএস পুনরায় কার্যকর করার জন্য দ্বিগুণ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রয়্যাল কলেজ অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সভাপতি বলেছেন, ” আমি হতবাক, মর্মাহত এবং দুঃখিত যে আমরা চিকিৎসকরা সঠিক মানের চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। রোগীরা আমাদের কাছে সবচেয়ে বিপদে থাকা অবস্থায় আসেন।”

আরসিএন-এর ৪৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি ৫,৪০০ ইউকে নার্সের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি। এতে তুলে ধরা হয়েছে:

রোগীরা করিডোর এবং ওয়েটিংরুমের ট্রলি এবং চেয়ারে মারা যাচ্ছেন, যেখানে “প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা’র প্রায় ভেঙে পড়েছে।”

 

এক নার্স বলেছেন, “করিডোরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, কিন্তু কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম বা অক্সিজেন ছিল না। আমি রোগীর উপর হাত দিয়ে চেপে সিপিআর দিচ্ছিলাম, অন্যরা তাকিয়ে দেখছিল।”

 

রোগীদের করিডোরে ওষুধ এবং রক্ত সঞ্চালন দেওয়া হচ্ছে। করিডোর ঠাণ্ডা, শোরগোলপূর্ণ এবং খুবই সংকীর্ণ।

 

এক নার্স বলেছিলেন: “আমি একজন রোগীকে চোখের সামনে করিডোরে মারা যেতে দেখেছি। এটি কীভাবে ন্যায্য হতে পারে?”

স্বাস্থ্য সচিব ওয়েস স্ট্রিটিং বলেছেন, করিডোর কেয়ার “আগের সরকার হতেই অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। এটি অনিরাপদ এবং অপমানজনক।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সময় লাগবে।

এদিকে, উত্তর লন্ডনের হুইটিংটন হাসপাতাল করিডোরে কাজ করার জন্য নার্স নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছে।

এই শীতে, ইংল্যান্ডের হাসপাতালগুলোতে রেকর্ডসংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স হ্যান্ডওভার করতে বিলম্ব হতে দেখা গিয়েছে। কিছু হাসপাতাল এতটাই বিপর্যস্ত যে রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাদের সাথে কোনো আত্মীয় বা সঙ্গী নিয়ে না আসতে।

আরসিএন জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি কর্মীদের উপর গুরুতর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং কিছু নার্স এনএইচএস ছেড়ে যাচ্ছেন।

এনএইচএস ইংল্যান্ডের জাতীয় মেডিকেল পরিচালক প্রফেসর স্যার স্টিফেন পাওইস বলেছেন,
“বর্তমান পরিস্থিতি কর্মীদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মতো। এটি কখনই এনএইচএস-এর মান হতে পারে না।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৬ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে দুই বাংলাদেশি গ্রেফতার, ৪০ হাজার পাউন্ড জরিমানা

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইস্যুতে বাতিল হল যুক্তরাজ্যের ৫০০ টির বেশি ফ্লাইট

গ্লাসগো পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী