TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আশ্রয়প্রার্থীদের বিনিময় নিয়ে আলোচনা

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকারের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের বিনিময় সংক্রান্ত একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে।

এই আলোচনায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে, যার অধীনে সীমিত সংখ্যক মানুষ যারা অনিয়মিত উপায়ে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন, তাদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে।

এর পরিবর্তে যুক্তরাজ্য ফ্রান্স থেকে এমন কিছু মানুষকে গ্রহণ করবে যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে যারা পারিবারিক পুনর্মিলনের ভিত্তিতে আবেদন করেছেন।

হোম অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফিন্যানশিয়াল টাইমস প্রথম এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, এবং আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এই বছর ছোট নৌকায় করে আগতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, কেয়ার স্টারমারের সরকার একটি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার চাপের মুখে রয়েছে। ইমিগ্রেশন ইস্যুতে লেবার পার্টির অগ্রগতি নিয়ে সমালোচনাকারী নাইজেল ফারাজের রিফর্ম পার্টির হুমকিও ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কৌশলবিদদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, “সরকার ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করছে।”

পরিবহনমন্ত্রী লিলিয়ান গ্রিনউড বুধবার স্কাই নিউজকে জানান, “ফ্রান্সের সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে”, তবে কোনো ভবিষ্যৎ চুক্তি কেমন হতে পারে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলেননি।

তিনি বলেন, “এটি কোনো স্বল্পমেয়াদি সমস্যা নয়। এটি মোকাবিলায় কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, কারণ এটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান চক্রের কাজ, যারা মানুষদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে চ্যানেল পারাপারে।”

ফেরত পাঠানোর বিষয় নিয়ে চাপ দেওয়া হলে গ্রিনউড বলেন, “আমি নিশ্চিত করতে পারি যে, চ্যানেল পাড়ি দিয়ে মানুষের অনিয়মিত আগমন এবং মানবপাচারের ভয়াবহ বাণিজ্য বন্ধে ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ অনিয়মিত আগমন ঘটেছে মঙ্গলবার, যেদিন ১২টি নৌকায় ৭০৫ জন মানুষ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছে।

তবে এটি এখনও ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের রেকর্ড ১,৩০৫ জনের তুলনায় অনেক কম।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত মোট আগমন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৮,৮৮৮ জনে। এই সংখ্যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৪২% বেশি এবং ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৮১% বেশি।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের আগমন সংখ্যা ২০১৮ সালে চ্যানেল পারাপারের তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে যে কোনো বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি।

ক্ষমতায় আসার আগে স্টারমার বলেছিলেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি করার চেষ্টা করবেন, তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো চুক্তি হয়নি।

স্টারমার ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চান, তার একটি পরিকল্পনা রয়েছে যাতে করে অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা যায় এবং যারা ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দেয় তাদের পেছনে থাকা অপরাধী গ্যাংগুলোকে ধ্বংস করা যায়।

ব্রেক্সিটের আগে যুক্তরাজ্য ছিল ইইউ-এর ডাবলিন রেগুলেশনের অংশ, যার অধীনে যেসব দেশ দিয়ে কোনো ব্যক্তি প্রথম ইইউতে প্রবেশ করে, সেই দেশেই তার আশ্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিয়ম ছিল।

তবে ইতালি মতো অনেক ইইউ দেশ এই নিয়ম বাস্তবে প্রয়োগ করে না।

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইতোমধ্যেই একটি বিস্তৃত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে রয়েছে — “লা তুকেতে চুক্তি” — যার অধীনে ২০২৩ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ফ্রান্সকে অর্থ প্রদান করবে অতিরিক্ত পুলিশি নজরদারি নিশ্চিত করতে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান ২০২২ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি করতে ব্যর্থ হন।

হোম অফিসের মুখপাত্র আরও বলেন: “প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে অবশ্যই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে বিপজ্জনক ছোট নৌকায় পারাপার ঠেকাতে, বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে।”

“আমরা ইতিমধ্যেই ফ্রান্স থেকে চুক্তি পেয়েছি যাতে তারা উপকূলে একটি নতুন বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করবে, একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট চালু করবে, পুলিশ বাহিনী বাড়াবে এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষকে অগভীর পানিতে হস্তক্ষেপ করার নতুন ক্ষমতা দেবে।”

“আমরা ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আরও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ অনুসন্ধান করছি, যাতে মানবপাচারকারী গ্যাংগুলোর ব্যবসা ধ্বংস করা যায়।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৭ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

ভালোবাসা দিবসে ফুলের সংকটে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ক্যানসারমুক্ত হলেন ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন

এমপি অ্যামেস হত্যায় অভিযুক্ত যুবক আটক