৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মার্কিন মসনদে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিজুড়ে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ চার বছর পর হোয়াইট হাউজে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ বেন তিনি এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে তার প্রথম মেয়াদের শুরু হওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেবেন বলেও মত তাদের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কৌশলগতভাবে বিশ্বের বড় শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। বাইডেন প্রশাসন যেমন রাশিয়া, চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে। তেমনি এসব ক্ষেত্রে ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রথমেই যেটি সামনে আসে সেটি হলো গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ইস্যু। বিশ্লেষকরা বলছেন, সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, সেটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তাকে।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু প্রশাসনকে ট্রাম্প কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তা নিয়েও সংশয় থেকে যায় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। যদিও ইতিহাস বলে, ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক অনেকটাই ঘনিষ্ঠ।
এরপরেই ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ বন্ধের চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প আগে থেকেই বলেছিলেন, ক্ষমতার শুরুতেই তিনি অবসান ঘটাবেন এই দীর্ঘ যুদ্ধের। প্রয়োজনে ইউক্রেনের কিছু অংশ রুশ প্রশাসনকে হস্তান্তর করে হলেও তিনি যুদ্ধ বন্ধ করাবেন।
কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জেলেনস্কি প্রশাসন কোনোমতেই নিজেদের ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি নয়। তাই কূটনৈতিকভাবে সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেই এই যুদ্ধ বন্ধের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তাকে, এমনটাই দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে ট্রাম্প একটি নতুন চুক্তি করার সুযোগ পেতে পারেন। যদিও সেখানে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে এটা আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখানেও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রেসিডেন্টকে। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে।
চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও তাইওয়ান ও টিকটকের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলোতে ট্রাম্পের নীতি এবং কৌশল ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান বিশ্লেষকরা। এমনকি চীন-রাশিয়া সহযোগিতার প্রসঙ্গেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিশ্বের অন্য শক্তির গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্য আমদানিতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে এবং অন্য দেশ থেকে আমদানিতে ১০-২০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় জড়িতদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি তার সমর্থকদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে চান। তবে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ট্রাম্প একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এম.কে
২১ জানুয়ারি ২০২৫