ইরান, রাশিয়া, সিরিয়া, কিউবা, ভেনিজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে লেখা এক যৌথ চিঠিতে এই সংস্থায় ১৯৪৭ সালে গৃহীত প্রস্তাব লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এই সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম, বৈঠক কিংবা দূতাবাসের কাজে অংশ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদেরকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সময় মতো ভিসা দিচ্ছে না এবং বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রেখেছে।
মার্কিন সরকার যাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা ওয়াশিংটনের নীতির বিরোধী মনে করে সেইসব দেশের প্রতিনিধিদের ওপর ভিসার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রাখায় তারই প্রতিবাদে ইরান ও রাশিয়াসহ ওই ছয়টি দেশ যৌথ চিঠি দিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের বিরোধী দেশগুলোর প্রতিনিধিদেরকে নানাভাবে হয়রানি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরোধী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক হয়রানি ও এত বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয় যাতে তারা জাতিসংঘরে কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারে বা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ রেজা মারান্দি যুক্তরাষ্ট্রে অন্য দেশের কূটনীতিকদের ভ্রমণের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ ধরনের আচরণ জাতিসংঘে দেয়া ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন এবং এই সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের জায়গা নয় বরং এটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।
এ কারণে ইরানসহ ওই ছয়টি দেশ তাদের চিঠিতে বলেছে, জাতিসংঘ অনুচ্ছেদের দুই নম্বর ধারা অনুযায়ী এই সংস্থায় সব দেশের সমান অধিকার রয়েছে এবং এখানে নির্দিষ্ট কোনো দেশের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ বা কোনো কিছুতে কাউকে বাধ্য করার সুযোগ নেই। এমনকি কোনো দেশ বাড়তি সুবিধা নেবে বা এই সংস্থায় তাদের প্রভাবকে নিজের ইচ্ছামতো কাজে লাগাবে তারও সুযোগ নেই।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে মার্কিন সরকার সব দেশকে এ প্রতিশ্রুতি দেয় যে ভ্রমণ সুবিধা বা ভিসা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নিরসনের জন্য নিরপেক্ষ আদালত গঠন করা হবে এবং সবার সমান সুবিধা থাকবে। ছয়টি দেশের চিঠিতে বলা হয়েছে এ বিষয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে আইন স্পষ্ট এবং কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা জাতিসংঘ মহাসচিবকে দেয়া হয়েছে। তাই ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন দেশকে যে হয়রানি করছে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
সূত্র: পার্স টুডে