TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যেই ট্রাম্প ও ইলন মাস্কবিরোধী বিক্ষোভ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টা ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশটির ৫০ অঙ্গরাজ্যের সব কটিতে বিক্ষোভ করেছেন লাখ লাখ মানুষ। ‘ট্রাম্পের পদত্যাগ চাই’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘আমাদের কোনো রাজা নেই’—শনিবার (৫ এপ্রিল) এমন স্লোগানে দিনভর উত্তাল ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ইউরোপের কয়েকটি দেশেও রাজপথে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা হরণ করছেন।

দেশব্যাপী এ বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। অধিকারকর্মীদের প্রায় দেড়শ গোষ্ঠী এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, কলোরাডো, মিনেসোটা, ক্যারোলাইনা, ডেলাওয়ারসহ সব অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহরগুলোয় ১ হাজার ৪০০টির বেশি বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ‘ইনডিভিজিবল’ নামের একটি সংগঠনের তথ্যমতে, শনিবারের বিক্ষোভে যোগ দিতে প্রায় ছয় লাখ মানুষ সই করেন।

বিক্ষোভের আয়োজকদের মধ্যে ছিল নাগরিক অধিকার সংস্থা, নারী অধিকার গোষ্ঠী, শ্রমিক সংগঠন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সংগঠন ও এলজিবিটিকিউ-প্লাস অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি তিনটি। সেগুলো হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে বিলিয়নিয়ারদের দখলদারি ও দুর্নীতি বন্ধ করা; ‘মেডিকেইড’ নামে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যবিমাসহ সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মসূচিগুলোয় অর্থায়ন বন্ধ না করা এবং অভিবাসী, ট্রান্সজেন্ডার ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধ করা।

শনিবার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখান থেকে বিক্ষোভের আয়োজক সংস্থা ইনডিভিজিবলের সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিশাল এ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা পাঠাতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।

বিক্ষোভে অংশ নিতে শনিবার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে আসেন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী টেরি ক্লেইন। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘অভিবাসন, সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই), পাল্টা শুল্ক, শিক্ষা-ট্রাম্পের নেওয়া সব নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এখানে এসেছি। আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদের পুরো দেশটার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে আমেরিকা গঠিত।’

শনিবার দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মনুমেন্টের আশপাশে মানুষের জমায়েত বড় হতে থাকে। অনেকের হাতে ছিল ট্রাম্প ও মাস্কবিরোধী স্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। কয়েকজন নিয়ে এসেছিলেন ইউক্রেনের পতাকা। কেউ কেউ আবার ‘ফিলিস্তিনের মুক্তি চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়ার প্রতিবাদ জানান।

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ অভিবাসন, বিদেশি সহায়তা, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারসংক্রান্ত আদেশগুলো। ট্রাম্পের বিভিন্ন আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। কোনো কোনো আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত। এ ছাড়া ট্রাম্পের গঠন করা ডিওজিই দায়িত্ব দিয়েছেন ধনকুবের ব্যবসায়ী ইলন মাস্ককে। এই সংস্থার অধীন যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬১ কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

শনিবার বিক্ষোভকারীদের বড় ক্ষোভ ছিল ডিওজিইর ওপর। এদিন মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন শত শত মানুষ। সংস্থাটি থেকে বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের যে ভাতা দেওয়া হয়, সেই তহবিলে কাটছাঁট করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ৬৪ বছর বয়সী লিন্ডা ফ্যালকাও বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত, আমি ক্ষুব্ধ।’

শনিবার ব্যস্ত শহর নিউইয়র্কের ম্যানহাটান এলাকায় মিছিল করেন বিক্ষোভকারীরা। সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে শাইনা কেসনার (৪৩) বলেন, ‘আমি খুবই ক্ষুব্ধ। বিশেষ সুবিধা পাওয়া একদল শ্বেতাঙ্গ, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে, তারা আমাদের দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে।’

শনিবার মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন সদস্য বিক্ষোভে অংশ নেন। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে প্রতিনিধি পরিষদে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট সদস্য জেমি রাসকিন বলেন, যিনি মুসোলিনির মতো রাজনীতি করেন এবং হারবার্ট হোভারের মতো করে অর্থনীতি সামাল দেন, তার অধীন দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

বিক্ষোভে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মল এলাকায় বড় জমায়েত হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা ‘সংবিধান রক্ষা করুন’, ‘আমাদের অধিকার রক্ষা করুন’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের উদ্দেশে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্য ইলহান ওমর বলেন, ‘আপনি যদি এমন একটি দেশে বিশ্বাস করেন, যেখানে আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি খেয়াল রাখব, দরিদ্রদের দেখভাল করব, শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেব, তাহলে আমাদের সেই দেশের জন্য লড়াই করতে হবে।’

ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যেও বিক্ষোভকারীরা বড় জমায়েত করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট বলেন, মানব ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে কর্তৃত্ববাদীদের যা আছে, তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন। তাই তারা সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করেন। আইন লঙ্ঘন করেন। তারপর তারা জনগণের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন।

এর আগে ট্রাম্পের নেওয়া নানা নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে হ্যামিলটন কলেজে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার জন্য মার্কিনদের ‘সম্ভাব্য আত্মোৎসর্গের’ জন্য প্রস্তুত হতে বলেন।

লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে কয়েক শ বিক্ষোভকারীর জমায়েত থেকে ট্রাম্পের উদ্দেশে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘কানাডা থেকে দূরে থাকুন, গ্রিনল্যান্ড থেকে দূরে থাকুন, ইউক্রেন থেকে দূরে থাকুন।’

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
০৭ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

বাংলাদেশি রোগী ,বয়কট না করার সিদ্ধান্ত, ভারতীয় চিকিৎসকদের সংগঠনের

নিউজ ডেস্ক

শরণার্থীদের কল্যাণে ইসলামী অনুদান

‘এইচএমপিভি’ ভাইরাসটি আসলে কী, এটি থেকে কীভাবে বাঁচবেন?