3.4 C
London
February 5, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

রিফর্ম পার্টির উত্থান ঠেকাতে মাইগ্রেশন ইস্যুতে কঠিন অবস্থানে লেবার পার্টি

লেবার এমপিদের একটি দল মাইগ্রেশন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটকে আহ্বান জানিয়েছে। তারা রিফর্ম পার্টির উত্থান ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চায়।

রিফর্ম পার্টির উত্থানে উদ্বেগের কারণে যেসব আসনে তারা দ্বিতীয় হয়েছে, সেসব আসনের লেবার এমপিরা একটি চাপ সৃষ্টিকারী গ্রুপ গঠন করেছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। এই গ্রুপ লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারকে অভিবাসন ও অপরাধ দমনে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

গত বছর যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ৮৯টি আসনে রিফর্ম পার্টি দ্বিতীয় স্থান দখল করার পর সেসব আসনের এমপিরা একটি অনানুষ্ঠানিক ককাস গঠন করেছেন। এই ককাসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী পার্টিকে পরাজিত করা। সম্প্রতি একটি জাতীয় জরিপে এই পার্টি প্রথমবারের মতো শীর্ষে উঠে এসেছে।

এদিকে, ডাউনিং স্ট্রিট রিফর্ম-পন্থী ভোটারদের কাছে কী ধরনের বার্তা প্রভাব ফেলে তা বোঝার জন্য এমপিদের সহায়তায় ডেটা ও কৌশল বিশেষজ্ঞদের পাঠিয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে লেবার পার্টির শীর্ষ পর্যায়েও এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

একটি গবেষণা অনুযায়ী, রিফর্ম ইউকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে অনেক লেবার আসন জিততে পারে।

আলোচনায় অংশ নেওয়া এক এমপি বলেন, “এখন রিফর্মকে কীভাবে পরাজিত করা যায়, সেটাই প্রধান ফোকাস। বিভিন্ন গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এবং আমরা ডাউনিং স্ট্রিটের সাথে আলোচনা করছি। নেতৃত্বের প্রতি প্রধান বার্তা হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসন ইস্যুতে আরও কঠোর হতে হবে।”

আরেকজন এমপি বলেন, তারা চায় মন্ত্রীরা বৈধ এবং অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ, বিশেষ করে হাজার হাজার মানুষকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আরও জোরালোভাবে কথা বলুক।

লেবার পার্টির এক সূত্র জানায়, “বিভিন্ন ইস্যুতে এমপিরা নিয়মিত বৈঠক করে। লেবার এমপিরা ঠিকভাবেই নাইজেল ফারাজের NHS সেবার জন্য জনগণকে অর্থ দিতে বাধ্য করার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা সংসদ ও নির্বাচনে রিফর্ম এবং অন্যান্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।”

ডাউনিং স্ট্রিট কয়েক মাস ধরেই রিফর্মের উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে এই উদ্বেগ আরও বেড়ে যায় যখন ইউগভের এক জরিপে দেখা যায়, রিফর্ম পার্টি লেবার এবং কনজারভেটিভদের চেয়ে এগিয়ে আছে। সোমবারের জরিপে রিফর্মের সমর্থন ছিল ২৫%, লেবারের ২৪% এবং টরিদের ২১%।

প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ, মর্গান ম্যাকসুইনি, রিফর্মের জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে লড়াইকে তার শীর্ষ অগ্রাধিকারের একটি হিসেবে দেখছেন। তিনি এমপিদের বলেছেন, স্থানীয় সরকারি সেবার দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখিয়ে লেবার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।

সম্প্রতি ডাউনিং স্ট্রিট বিভিন্ন আসনে লেবারের স্থানীয় উপ-নির্বাচনে ভালো ফলাফল করার বিষয়ে কৌশলবিদ এবং জরিপ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এমপিদের ব্রিফিং দিয়েছে।

একজন এমপি বলেন, স্থানীয় ভোটাররা যে প্রকল্পের দাবি করে আসছে, তা চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাকসুইনি তার সহযোগীদের বলেছেন, ১৫ বছর আগে পূর্ব লন্ডনে ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টিকে পরাজিত করতে তিনি এই কৌশলটি সফলভাবে ব্যবহার করেছিলেন।

সংসদীয় লেবার পার্টির সেক্রেটারি এবং ম্যাকসুইনির ঘনিষ্ঠ মিত্র ম্যাথিউ ফল্ডিং এই ব্রিফিং আয়োজনের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত কয়েকজন এমপি। তবে কিছু এমপি অভিবাসন ইস্যুতে পার্টি নেতৃত্বের আরও কঠোর পদক্ষেপ চায়।

একজন এমপি বলেন, সাম্প্রতিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রীরা অভিবাসন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সন্তোষজনক ছিলেন না, বিশেষ করে বিদেশে আশ্রয়প্রার্থী যাচাই প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে। যদিও স্টারমার বলেছেন তিনি এ বিষয়ে উন্মুক্ত, তবে মন্ত্রীরা মূলত এর উচ্চ ব্যয় নিয়ে বেশি কথা বলেছেন।

আরেকজন এমপি মন্ত্রীদের যুক্তরাজ্য থেকে লোক ফেরত পাঠানোর ফ্লাইট বিষয়ে আরও জোরালো অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

একজন এমপি বলেন, “আমাদের অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং একইসাথে আমাদের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা আরও জোরে প্রচার করতে হবে।”

ডানপন্থী পপুলিস্টদের মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

রিফর্ম পার্টির হুমকি মোকাবিলায় কৌশল নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি কিছু এমপি ইউকের বাইরে থেকে শিক্ষা নিতে চাইছেন।

একটি ছোট দল আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জার্মানি সফরের পরিকল্পনা করছে, যেখানে তারা ডানপন্থী আফডি (Alternative für Deutschland) পার্টির উত্থান থেকে কী শিখতে পারে তা জানার চেষ্টা করবে।

রিফর্ম পার্টি এই বছরের স্থানীয় নির্বাচনে আসন জয়ের আশা করছে, তবে তারা আগামী বছর আরও বড় ফলাফল চায়, বিশেষ করে পরবর্তী স্থানীয় নির্বাচন এবং ওয়েলস পার্লামেন্টের ভোট তাদের টার্গেট। তবে লেবারের কিছু নেতার বিশ্বাস, জাতীয় নির্বাচনের আগে রিফর্মের জনপ্রিয়তা কমে যাবে।

একজন মন্ত্রী বলেন, “রিফর্ম এখন ভালো করছে, তবে ইউকিপও একসময় জাতীয় নির্বাচনের মাঝের সময়ে ভালো করেছিল। তবে মানুষ তাদের নীতির দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করলেই পরিস্থিতি বদলে যাবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ভয়ংকর তথ্য ফাঁস করলেন মেগান

ইউকে ব্যাংকগুলি প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে

এবার ওমিক্রনের টিকার অনুমোদন দিল যুক্তরাজ্য