যুক্তরাজ্যের শীর্ষ আদালতে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পরেও আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের বিকল্প পথ খুঁজছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷ তবে সরকারপ্রধানের এমন ঘোষণার পর আইনজীবীরা বলছেন, সরকারের বিকল্প পদক্ষেপ কতোটা আইনি বাধা পার হতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷
বুধবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে যুক্তরাজ্য সরকারের নেয়া পরিকল্পনাকে আইন বর্হিভূত বলে রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট৷ এর আগে আপিল আদালত থেকেও সুনাক সরকারের পরিকল্পনাকে আইন বর্হিভূত বলা হয়েছিল৷
এই ইস্যুতে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আদালতের দেয়া চারটি রায়ের মধ্যে তিনটি রায়ে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য মোটেও নিরাপদ দেশ নয়৷ কারণ দেশটির আশ্রয়ব্যবস্থার মধ্যে ‘গুরুতর ঘাটতি’ রয়েছে৷
এরপরও সুনাক সরকারের এই পরিকল্পনাকে ভিন্ন কোনো উপায়ে বাস্তবায়ন করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্যরা৷
ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, রুয়ান্ডার সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তিনি৷ ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে আদালতের আপত্তির কারণগুলো দূর করা হবে৷ এমনকি, রুয়ান্ডাকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি জরুরি আইন প্রণয়ন করতে চান তিনি৷ এমনকি একটি পদক্ষেপ তিনি নিতে চান, যার মধ্যে দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় আদালত যাতে কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়৷
কিন্তু তার নেয়া পদক্ষেপ আদালতকে কতোটা সন্তুষ্ট করতে পারবে এবং তার ব্লকের ডানপন্থি রাজনীতিকদের অস্থিরতা কমাতে কতোটা কার্যকর হতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷ এসব ঘটনা তার নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়ারও শঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷
কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতা নীল ও’ব্রেইন বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন যে, আমাদের যা প্রয়োজন তাই করতে হবে৷’’
বুধববার সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা তাদের রায়ে বলেছিলেন যে রুয়ান্ডাকে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসাবে বিবেচনা করার আগে ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ করতে হবে৷
যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, রুয়ান্ডা চুক্তিকে একটি সমঝোতা স্মারক থেকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তিতে উন্নীত করা হবে এবং রুয়ান্ডা থেকে কাউকে বিতাড়ন করা হলে তাকে ব্রিটেন ছাড়া অন্য দেশে পাঠানো যাবে না, সেটিও নিশ্চিত করা হবে৷
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক গ্যাভিন ফিলিপসন বলেন, ‘‘আপনাকে রুয়ান্ডার সব কিছু ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে৷ তবে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না যে, শুধু রায়ের পর্যালোচনা দেশটিকে নিরাপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট হবে কিনা৷’’
বার্মিংহাম ল স্কুলের সাংবিধানিক আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যালান গ্রিন বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি যুক্তরাজ্যের বাধ্যবাধকতা এবং সুপ্রিম কোর্টের উদ্বেগের সমাধান একটি নতুন চুক্তির মধ্য দিয়ে কিভাবে সম্ভব হবে, তা স্পষ্ট নয়৷
আইন বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, জরুরি আইনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান হয়তো করা যাবে৷ তবে যারা ডিপোর্টের মুখোমুখি হবেন তাদের কাছেও কিন্তু ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে৷
বার কাউন্সিল জানিয়েছে, রুয়ান্ডাকে একটি নিরাপদ দেশ হিসাবে বিবেচনায় পার্লামেন্টে আইন পাস করার ক্ষেত্রে ‘গভীর উদ্বেগ’ রয়েছে৷ বরং তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
কনজারভেটিভ পার্টির ডানপন্থিদের মধ্যে যারা ইউরোপীয় কনভেনশন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও৷ তিনি জানিয়েছেন, কোনো বিদেশি আদালতের রায়ে ফ্লাইট বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি তিনি গ্রহণ করবেন না৷
ইংলিশ চ্যানেলে ছোটো নৌকা বন্ধ করা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পাঁচ অগ্রাধিকারের একটি৷ দেশটির শীর্ষ আদালতের রায় সেখানে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে৷ অন্যদিকে, সুনাকের বিরোধী লেবার পার্টি জনমত জরিপে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে৷ ফলে তার দলের ডানপন্থি সমালোচকেরা বলছেন, যা করার সুনাককে খুব দ্রুত করতে হবে৷
নিউ করজারভেটিভ গ্রুপ অব লমেকারস-এর চেয়ারের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের হাতে আর কোনো সময় বাকি নেই৷ ফলে নতুন বিলটি এক সপ্তাহের মধ্যে সংসদে আসতে হবে, কয়েক মাসের মধ্যে ফ্লাইটগুলো যাতে উড়তে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য এটিতে সবকিছু থাকতে হবে৷’’
কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যপন্থিরা অবশ্য এই পরিকল্পনা নিয়ে হতাশ৷ তাদের একজন বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি এই নীতিটি মৃত এবং সমাহিত৷’’
এম.কে
১৮ নভেম্বর ২০২৩