লন্ডনের এক কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য সোফিয়ান মাজেরা, যাকে ‘নৃশংস ও সহিংস’ অপরাধের দায়ে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এখন দাবি করছেন—তাকে রুয়ান্ডায় ফেরত পাঠানো হলে তা তার মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। লন্ডনের আপিল আদালতে এই মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
মাজেরা ছিলেন এক ভয়ংকর গ্যাংয়ের সদস্য, যারা বন্দুক, ছুরি ও বেসবল ব্যাট দিয়ে রাস্তায় মানুষ অপহরণ ও নির্যাতন করত। পুলিশ একে বর্ণনা করেছে “গত পাঁচ বছরে লন্ডনের অন্যতম সহিংস গ্যাং” হিসেবে। তাদের শিকারদের বর্ণবিদ্বেষ ও সমকামবিরোধী ঘৃণার ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হতো। আদালতে প্রমাণিত হয়—তারা শিকারদের গুলি করে হত্যা, গলা কেটে ফেলা, চোখ উপড়ে ফেলা বা পুড়িয়ে মারার হুমকি দিত।
উড গ্রিন ক্রাউন কোর্টের বিচারক উইটোড পাওয়লাক রায়ে বলেন, “এই গ্যাং নৃশংস সহিংসতার প্রতি আসক্ত ছিল এবং তাদের শিকারদের ভিডিও গেমের চরিত্রের মতো মনে করত।” তিনি আরও সতর্ক করেন, তাদের উপস্থিতি জননিরাপত্তার জন্য “বাস্তব হুমকি”।
২০০৬ সালে মাজেরাকে আজীবন কারাদণ্ড ও রুয়ান্ডায় বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সাজা পরিবর্তন করে ‘জননিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালীন কারাবাস’ নির্ধারণ করা হয়। রুয়ান্ডা থেকে মা ও বোনদের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে লন্ডনে আসা মাজেরার আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়। তবুও ২০০৫ সালের অপরাধের কিছুদিন আগে তিনি যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পান, যদিও এর আগে চারবার কারাভোগ করেছেন।
২০১২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে তার বহিষ্কারাদেশ জারি করেন, কিন্তু তিনি একের পর এক আপিল চালিয়ে যান। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে আংশিক জয় পান, যখন তার যুক্তরাজ্যে কাজ করার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তবে এক বছর পর অভিবাসন ট্রাইব্যুনাল বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে, রায়ে উল্লেখ করা হয়—“রুয়ান্ডায় ফেরত পাঠানো হলে তা তার মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে।”
কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে উচ্চতর ট্রাইব্যুনাল সেই রায় উল্টে দেয়। এখন মামলাটি লর্ড জাস্টিস বিন, লেডি জাস্টিস কিং ও লর্ড জাস্টিস ওয়ারবির বেঞ্চে শুনানি চলছে।
মাজেরা বর্তমানে লেস্টারে হোম অফিসের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন এবং সপ্তাহে £৩৮.৫০ হারে ভাতা পাচ্ছেন। তিনি দাবি করেছেন, কারামুক্তির পর আর কোনো অপরাধে জড়াননি এবং বহিষ্কার আদেশ বাতিলের আবেদন বিবেচনায় সাত বছরের বিলম্ব হয়েছে।
তার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, রুয়ান্ডায় ফেরত পাঠানো হলে তিনি ও তার পরিবার গুরুতর ক্ষতির মুখে পড়বেন। মাজেরা জানিয়েছেন, তিনি ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার সময় তার বাবার হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, তাকে ফেরত পাঠানো হলে তীব্র মানসিক বিপর্যয় এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র সচিবের পক্ষে আইনজীবী টম টাবোরি আদালতে যুক্তি দেন, “বহিষ্কারের জনস্বার্থ কেবল অপরাধ পুনরাবৃত্তির ঝুঁকিতে সীমিত নয়; এটি সমাজে আইনশৃঙ্খলার প্রতি আস্থা বজায় রাখার প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ।”
বিচারকরা এখন রায় সংরক্ষণ করেছেন, যা পরবর্তী তারিখে ঘোষণা করা হবে।
সূত্রঃ ডেইলি মেইল
এম.কে


