ইংল্যান্ডজুড়ে অবৈধ বোটক্স জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহারের ফলে অন্তত ৩৮ জন ব্যক্তি স্নায়ু বিষক্রিয়া নামক ভয়াবহ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা (UKHSA) এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এসব ঘটনা গত ৪ জুন থেকে ১৪ জুলাই ২০২৫ সালের মধ্যে মূলত উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ড, পূর্বাঞ্চল ও ইস্ট মিডল্যান্ডসে ঘটেছে।
UKHSA-এর মতে, প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে—এসব বিষক্রিয়া অনুমোদনহীন ও লাইসেন্সবিহীন বোটক্স জাতীয় পণ্য প্রয়োগের ফলেই হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা গেছে গিলতে সমস্যা, জিহ্বা ভারী হয়ে আসা, কথা জড়ানো এবং এমনকি শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা পর্যন্ত। কয়েকজনকে ইতোমধ্যে রেসপিরেটরি সাপোর্টে নিতে হয়েছে।
NHS জানায়, বটুলিজম হয় Clostridium botulinum নামক ব্যাকটেরিয়ার তৈরি বিষের কারণে, যা স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে। যদিও এই একই বিষ উপাদান বোটক্সসহ নানা রূপচর্চার ইনজেকশনে ব্যবহৃত হয়, তবে কেবলমাত্র পরিশোধিত ও অনুমোদিত সংস্করণ নিরাপদ। অবৈধ ও অশুদ্ধ সংস্করণ সরাসরি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
UKHSA এর চিকিৎসক পরামর্শদাতা ডা. গৌরী গডবোলে জানান, এই বিষক্রিয়ার উপসর্গ ইনজেকশন নেওয়ার চার সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে। তিনি সকলকে সতর্ক করে বলেন, কেউ যদি গলায় খাবার আটকে যাওয়া, কথা বলতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাস নিতে সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে NHS 111 নম্বরে যোগাযোগ করে জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে।
এই ঘটনা সামনে আসার পর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা রূপচর্চা বিষয়ক সকল ইনজেকশন শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। NHS ওয়েবসাইটে কিভাবে যোগ্য প্র্যাকটিশনার বাছাই করতে হয়—সে সম্পর্কেও বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে।
NHS ইংল্যান্ডের কো-ন্যাশনাল মেডিকেল ডিরেক্টর প্রফেসর মেঘনা পান্ডিত বলেন, যখন এই ধরনের ইনজেকশন ভুল হাতে পড়ে, তখন সংক্রমণ, স্থায়ী ক্ষত এবং এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও তৈরি হয়। শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড ডাক্তার, নার্স বা ফার্মাসি প্রেসক্রাইবারদেরই এই চিকিৎসা দেয়ার অধিকার থাকা উচিত।
অন্যদিকে, মেডিসিন ও হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির (MHRA) চিফ সেফটি অফিসার ডা. অ্যালিসন কেভ জানিয়েছেন, লাইসেন্সবিহীন বোটক্স জাতীয় পণ্য কেনা বা প্রয়োগ করা মানেই নিজেকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলা। তিনি বলেন, “যে পণ্যের ওপর MHRA-এর মান নিয়ন্ত্রণ নেই, সেগুলোর গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব। এসব পণ্য জীবননাশের কারণ হতে পারে।”
সর্বশেষ, বিশেষজ্ঞরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছেন—রূপচর্চা করতে গিয়ে যেন জীবনের ঝুঁকি না নেওয়া হয়। কম মূল্যে বা অবৈধভাবে পাওয়া ইনজেকশন আপনার মুখের সৌন্দর্যের বদলে হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী বিভীষিকা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৩ জুলাই ২০২৫