ঈদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় পূজাপার্বণকে লক্ষ্য রেখে মৌলভীবাজারে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আসছে। চলতি বছরের তিন মাসে ১৪২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। টাকার হিসাবে ১ হাজার ৭১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ দ্বিতীয়। তবে বরাবরের মতো প্রবাসে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নানা হয়রানি বন্ধসহ প্রণোদনা আরও পাঁচ শতাংশ বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বৈশ্বিক নানা প্রতিবন্ধকতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ সবসময়ই কমবেশি উঠানামা করে আসছে। তবে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের পরিস্থিতি দেখা গেছে এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ জেলায় রেমিট্যান্স প্রবাহের সংখ্যা বরাবরই ঊর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিলেট বিভাগে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ২৯ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় এসেছে ৫৭৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৬ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিলেট বিভাগে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৫৪৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৩০ হাজার ৫১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় এসেছে ৫৬৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৬ হাজার ৮২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এদিকে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে জেলায় রেমিট্যান্স প্রবণতার সংখ্যা খুবই ভালো এবং ঊর্ধ্বমুখী।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদুল আযহায় আরও আশাতীত রেমিট্যান্স আসবে। ২০২৫ সালের তিন মাসে সিলেট বিভাগে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৮৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধুমাত্র মৌলভীবাজারে এসেছে ১৪২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ১ হাজার ৭১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের শুধু জানুয়ারিতে মৌলভীবাজারে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৯ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৪৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৫ দশমিক শূন্য মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৫৪০ কোটি টাকা এবং মার্চ মাসে এ জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ৭০৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এবং স্থানীয় ব্যাংকগুলোর প্রণোদনামূলক কার্যক্রম রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। তবে একাধিক রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসে তাদের আরও সুষ্ঠুভাবে থাকার বন্দোবস্ত করা এবং দেশে এসে যাতে কোনো রকমের হয়রানির শিকার না হন- সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি জানিয়েছেন।
মৌলভীবাজার আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার এ কে এম আনোয়ার হোসেন জানান, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের আস্তা ফিরে আসায় রেমিট্যান্স বাড়ছে। তবে বৈধ চ্যানেলে আরও দ্রুততার সঙ্গে প্রাপকের কাছে টাকার আসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
মৌলভীবাজার জনতা ব্যাংকের ডিজিএম মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের সুষ্ঠু প্রণোদনায় দেশে হুন্ডি ব্যবসা কমে আসার দাবি করে প্রণোদনা আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবনা জানান।
সরকার বিদেশিদের দেশে ব্যবসায় বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে রেমিট্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যাবার কথা জানান সিনিয়র ব্যাংকার চামেলি।
অপরদিকে, মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস বিগত অর্থ বছরে এ জেলা থেকে প্রায় ৩০ হাজার লোককে দক্ষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। এসব দক্ষ লোক বৈধ পথে ব্যাপক আকারে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
এ জেলার অধিকমাত্রার রেমিট্যান্স এর ধারা অব্যাহত রাখতে আরও দক্ষতা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ জানান এ কর্মকর্তা।
জেলা জনশক্তি রফতানি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ ইংল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন।
এম.কে
২৯ এপ্রিল ২০২৫