লন্ডনের মেয়র সাদিক খান অবশেষে মুখ খুলেছেন রাজধানীতে গ্রুমিং গ্যাং বা শিশুশোষণ চক্র নিয়ে চলমান বিতর্কে। মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে, তারা প্রায় ৯,০০০টি পুরোনো মামলা পুনর্মূল্যায়ন করছে— যা শিশু যৌন শোষণ সংক্রান্ত অপরাধে লন্ডনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তদন্ত উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই পদক্ষেপ আসে এক্সপ্রেস/মাই লন্ডন–এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর, যেখানে প্রকাশ পায় বহু গ্রুমিং গ্যাং মামলা লন্ডনে উপেক্ষিত ছিল। এর আগে সাদিক খান দাবি করেছিলেন, লন্ডনে রচডেল বা রদারহ্যামের মতো কোনো সংগঠিত শোষণচক্র নেই। কিন্তু নতুন তথ্য প্রকাশের পর মেয়র ও মেট পুলিশের অবস্থান নাটকীয়ভাবে বদলে যায়।
মেয়রের কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা শিশুদের যৌনভাবে শোষণ করে, তারা জঘন্য অপরাধী। সাদিক স্পষ্ট বলেছেন, তাদের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। এসব শিশুরা শুধু অপরাধীদের নির্যাতনের শিকার হয়নি, বরং রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ ব্যর্থতার শিকার।”
সাদিক খান জানান, তিনি মেট পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন কোনো তথ্য গোপন না রেখে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। ২০২৩ সালে তিনি HMICFRS–কে অনুরোধ করেন, মেট পুলিশের শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা খতিয়ে দেখতে। প্রতিবেদনের সব সুপারিশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
নারী ও শিশু সুরক্ষায় মেয়র ইতোমধ্যেই £২৩৩ মিলিয়নেরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। মেট পুলিশও এখন ‘চাইল্ড ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে নিখোঁজ ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং যৌন শোষণের প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, “শিশুদের বিরুদ্ধে যে কোনো যৌন অপরাধ ঘৃণ্য, তবে গ্রুপভিত্তিক অপরাধ—যা ‘গ্রুমিং গ্যাং’ নামে পরিচিত—তা আরও ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক। আমরা এসব অপরাধের অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই এবং প্রমাণের ভিত্তিতে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করি।”
তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের পর থেকে মেট পুলিশের ১১,০০০ কর্মকর্তা বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং শিশু শোষণ দমন ইউনিট সম্প্রসারিত হয়েছে। গত বছরে শিশু যৌন শোষণ মামলায় তিনগুণ বেশি অগ্রগতি হয়েছে, ১৩৪ জন অতিরিক্ত সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বারোনেস কেইসির সুপারিশে গঠিত জাতীয় পুনঃতদন্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মেট বর্তমানে গত ১৫ বছরের প্রায় ৯,০০০টি মামলা পুনর্মূল্যায়ন করছে। এসব মামলার মধ্যে পারিবারিক, সহপাঠী, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও প্রচলিত ‘গ্রুমিং গ্যাং’ কাঠামোর বাইরের ঘটনাও রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত মেট পুলিশ ও লন্ডনের মেয়র উভয়ে একমত হয়েছেন যে, শিশু যৌন শোষণ রোধে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। মেট পুলিশের মুখপাত্র বলেন, “এই ভয়াবহ অপরাধের শিকার প্রতিটি শিশুর সুরক্ষা ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা—এটাই আমাদের অটল অঙ্গীকার।”
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে

