লন্ডনের ফ্যামিলি কোর্টে এক নজিরবিহীন রায়ে কেনিয়ার সাতজন নাগরিক প্রমাণ করেছেন যে তারা ব্রিটিশ সেনাদের সন্তান। বাণিজ্যিকভাবে উন্মুক্ত ডিএনএ ডাটাবেস ব্যবহার করে অজানা পিতাদের শনাক্ত করা হয়—যাদের ছয়জন ছিলেন ব্রিটিশ আর্মি ট্রেনিং ইউনিট ইন কেনিয়া (Batuk)-এর সদস্য এবং একজন ছিলেন ঠিকাদার। যুক্তরাজ্যে এই প্রথম আদালতে এমন ডিএনএ-ভিত্তিক পিতৃত্ব প্রমাণ গৃহীত হলো। রায়ের ফলে তারা এখন ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই মামলার নেতৃত্ব দেন ব্রিটিশ আইনজীবী জেমস নেতো ও জেনেটিসিস্ট ডেনিস স্নাইডারকম্ব কোর্ট। তারা কেনিয়ার নানিউকি অঞ্চলে এক প্রকল্পের মাধ্যমে ডিএনএ নমুনা ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করেন, যেখানে বহু মানুষ দাবি করেন তাদের পিতা ছিলেন Batuk ঘাঁটির সেনা। যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্য ডিএনএ ডাটাবেসে আত্মীয়দের সন্ধান পেয়ে সাতজনের পিতৃত্ব নিশ্চিত হয়।
আবেদনকারীদের একজন পিটার ওয়ামবুগু, ৩৩ বছর বয়সী এক শেফ, ছোটবেলা থেকেই জানতেন তার পিতা একজন ব্রিটিশ সৈনিক ছিলেন। কিন্তু কখনও দেখা হয়নি। মিশ্র বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে শিশুকালে বৈষম্য সহ্য করতে হয়েছে তাকে। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় তার পিতার পরিচয় মেলে এবং বহু বছর পর তাদের সাক্ষাৎ হয়। পিটার বলেন, “এই ৩০ বছরের যন্ত্রণা আজ আনন্দে পরিণত হয়েছে।”
অন্য এক আবেদনকারী, যার নাম আইনি কারণে প্রকাশ করা হয়নি, জানান তিনি চার বছর বয়সে একবার পিতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তারপর আর কখনও নয়। তিনি বলেন, “পিতা ছাড়া বড় হওয়া ছিল খুব কঠিন, নিজেকে চরমভাবে পরিত্যক্ত মনে হতো।”
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী জেমস নেতো বলেন, “আজকের দিনটি অনেক পরিবারের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষার অবসান। যাদের শুধু প্রশ্ন ছিল, আজ তারা উত্তর পেয়েছেন।” তিনি জানান, Batuk ঘাঁটির আশেপাশে আরও বহু মানুষ একই পরিস্থিতিতে আছেন এবং পরবর্তী ধাপে তাদের জন্যও ন্যায়বিচারের চেষ্টা করা হবে।
মানবাধিকার কর্মী অ্যান্ড্রু ম্যাকলিয়ড বলেন, “এই রায় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করবে।” প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “পিতৃত্ব সংক্রান্ত অভিযোগ ব্যক্তিগত বিষয় হলেও, সরকার স্থানীয় শিশু সহায়তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করে।”
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, এক বছরের অনুসন্ধান শেষে এই ঘটনাটি তাদের আসন্ন পাঁচ পর্বের পডকাস্ট সিরিজ ‘World of Secrets’-এর অংশ হিসেবে প্রকাশিত হবে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৫ অক্টোবর ২০২৫