যুক্তরাজ্যের রানিমিড ট্রাস্টের নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ও সংসদীয় বিতর্কে ব্যবহৃত অভিবাসনবিষয়ক শত্রুভাবাপন্ন ভাষা দেশটিতে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া গঠন করেছে এবং চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে সাহস যুগিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ৫২,৯৯০টি সংবাদ প্রতিবেদন ও ৩১৭টি সংসদীয় বিতর্কের ৬ কোটি ৩০ লাখ শব্দ বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি জানায়, এই সময়ে ‘মাইগ্র্যান্ট’ (migrant) ও ‘ইমিগ্র্যান্ট’ (immigrant) শব্দের সঙ্গে ‘অবৈধ’ (illegal) শব্দের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। ২০১০–১৪ সালের তুলনায় এই সময়ে অভিবাসীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে ‘অবৈধতা’ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই ধরনের ভাষা অভিবাসনকে স্বভাবতই অপরাধ হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের পর থেকে ‘শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ’ নীতি আইন, রিপোর্টিং ব্যবস্থা ও ডেটা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে নজরদারি রাষ্ট্রকে স্বাভাবিক করে তুলেছে। মিডিয়ায় অভিবাসীদের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মেক্সিকান, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, এশীয়, আইরিশ, হাইতিয়ান, মুসলিম, ইহুদি, অশ্বেতাঙ্গ, ভেনেজুয়েলান, কিউবান ও আফ্রিকান। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদমাধ্যমে অভিবাসীদের উপস্থাপন করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাতিগত সংখ্যালঘুদের চিত্রই তুলে ধরা হয়।
সংসদীয় বিতর্কে অভিবাসনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত শব্দগুলোর মধ্যে রয়েছে illegal, net, committee, act, bill, tackle, level, reduce, system ও mass। তবে ইউক্রেনীয়দের প্রসঙ্গে মানবিক শব্দ যেমন অতিথি, সাহসী, সম্প্রদায় ও ডায়াসপোরা বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এটি দেখায় যে অভিবাসন নিয়ে আলোচনায় দ্বৈত মানদণ্ড কার্যকর রয়েছে।
প্রতিবেদনটি আরও জানায়, রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার উচ্চ পর্যায় থেকে প্রচারিত বর্ণবাদী ভাষা অভিবাসনকে ব্রিটিশ জীবনধারার জন্য অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করছে। এর ফলে আরও কঠোর ও শত্রুভাবাপন্ন অভিবাসন নীতিকে ন্যায্যতা দেওয়া হচ্ছে।
রানিমিড ট্রাস্টের প্রতিবেদনে ‘স্টপ দ্য বোটস’ (stop the boats) রাজনৈতিক স্লোগানকে জনমত প্রভাবিত করার অন্যতম প্রধান উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে দাঙ্গাকারীরা ব্যানার ও শ্লোগানে এই স্লোগানের ব্যবহার করেছে, যা প্রমাণ করে যে শত্রুভাবাপন্ন ভাষা জনগণের একটি অংশকে বর্ণবাদী সহিংসতায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
২০১৯–২৪ সময়কালে অভিবাসনবিষয়ক নেতিবাচক ভাষা ব্যবহারকারী সংবাদ ও রাজনৈতিক বিতর্ক একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিল রেখেছে। ২০২৩ সালে এ ধরনের ভাষার ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে এবং ২০২৪ সালে সামান্য কমলেও উচ্চ মাত্রায় বজায় ছিল।
অগাস্ট ২০২৪-এর সাউথপোর্ট হামলার পর যে অস্থিরতা দেখা দেয় তা সম্প্রদায়ের ঐক্যের জন্য নতুন কৌশল গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করেছে। মিনিস্ট্রি অব হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, একটি জাতীয় কৌশল তৈরি করতে টাস্কফোর্স কাজ করছে এবং ৭৫টি এলাকায় সম্প্রদায় সেবায় ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৩ আগস্ট ২০২৫