বাজার থেকে উদ্বেগ দূর করে একটি ভালো সমাজ গড়া সহজ নয়—কিন্তু এটি সম্ভব, বলেছেন যুক্তরাজ্যের স্থাপত্য সমালোচক রোয়ান মোর।
যুক্তরাজ্য এমন একটি দেশ হওয়া উচিত যেখানে প্রত্যেকে নিরাপদে একটি ভাল মানের বাড়িতে থাকতে পারে। এমন একটি বাড়ি যা মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট বড়, আবার স্বপ্নের আশ্রয় ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়। যা শান্তি ও গোপনীয়তা প্রদান করে।
এ রকম একটি স্পষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি উন্নত দেশের আবাসন নীতির ক্ষেত্রে। কিন্তু ব্রিটেন এখনো সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে নাই। যদিও লেবার সরকার এই সমস্যাগুলির প্রতি মনোযোগ দিয়েছে, তবে তাদের পরিকল্পনা দ্রুত বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
লেবার সরকার পরিষ্কারভাবে বলেছে যে তারা ১৫ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করবে। কিন্তু এই বাড়িগুলো সরাসরি সরকার তৈরি না করে, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হচ্ছে পরিকল্পনা প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিয়ে। তবে এই উদ্যোগের প্রধান সমস্যা হলো উৎপাদন সামগ্রীর সাশ্রয়ী মূল্যের অভাব।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে:
প্রায় ১.৫ লাখ শিশু অস্থায়ী আবাসনে বাস করছে
১৩ লাখের বেশি পরিবার সামাজিক আবাসনের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে
ভাড়া বছরে প্রায় ৮.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে
সরকারি গবেষণা অনুযায়ী, গৃহের সংখ্যায় ১% বৃদ্ধি করলে বাড়ির দাম মাত্র ২% কমে। এর মানে ১৫ লাখ বাড়ি নির্মাণ করলেও দাম কমবে খুবই সামান্য, যা বাড়ি কেনার জন্য সংগ্রাম করা মানুষের জন্য বড় কোনো পরিবর্তন বয়ে আনবে না।
নতুন পরিকল্পনা কি হওয়া উচিতঃ
১. আর্থিক ও কর নীতির সংস্কার:
বার্ষিক সম্পত্তি কর চালু করা যা স্ট্যাম্প ডিউটি এবং কাউন্সিল ট্যাক্সের পরিবর্তে কাজ করবে।
সামাজিক আবাসন বাড়ানোর জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিদ্যমান বাড়ি কিনতে উৎসাহিত করা।
২. ফাঁকা অফিস ভবন ও শপিং সেন্টার রূপান্তর:
প্যারিসের উদাহরণে দেখা যায়, পুরানো অফিসকে সামাজিক আবাসনে রূপান্তর করা সম্ভব।
কর সংস্কার করে বিদ্যমান ভবনের সংস্কারে উৎসাহ দেওয়া (বর্তমানে নতুন বাড়ির চেয়ে সংস্কারে বেশি কর আরোপ করা হয়)।
৩. গণআবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ:
১৯৪৫ সালের লেবার সরকারের মতো একটি শক্তিশালী গণআবাসন কর্মসূচি প্রয়োজন।
এটি কেবল গরিবদের জন্য নয়, বরং মিশ্র সম্প্রদায়ের জন্যও।
৪. জায়গার সঠিক ব্যবহার:
অব্যবহৃত জমি যেমন গলফ কোর্সের প্রান্ত বা রেল স্টেশনের আশপাশে ঘনত্বে বাড়ি নির্মাণ।
উঁচু দালান ছাড়াই “জেন্টল ডেনসিটি” নীতিতে বাড়ি তৈরি।
৫. টেকসই নির্মাণ:
শক্তি-দক্ষ উপকরণ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরি করা (উদাহরণ: নরউইচের গোল্ডস্মিথ স্ট্রিট প্রকল্প)।
স্পেনে কাঠ, পাথর, র্যামড আর্থের মতো প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ করা হয়।
৬. সামাজিক সংহতি গড়ে তোলা:
প্রতিবেশীদের মধ্যে মেলামেশার সুযোগ রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ নকশা তৈরি করা।
এমন বাড়ি তৈরি করা যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকে।
যুক্তরাজ্যে বাসস্থান নিয়ে এই সমস্যাগুলির কোনো সহজ সমাধান নেই। এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন। লেবার সরকারের ঘোষিত নীতিগুলি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা শুধু বাড়ির সংখ্যা বাড়াবে, কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের অভাব, পরিবেশের ক্ষতি, এবং জীবনের মানের পরিবর্তন আনতে পারবে না।
ঘরকে শুধুমাত্র লাভের জন্য একটি সম্পত্তি হিসেবে না দেখে, এটি যেন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া উচিত—একটি নিরাপদ আশ্রয়, যা শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক সংহতি নিয়ে আসে।
লেখকঃ রোয়ান মোর
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫