‘সমালোচনা’ ও ‘মানহানি’-সংক্রান্ত কনটেন্ট সরানোর জন্য গুগলের কাছে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরকারের তথ্য চাওয়াসহ কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ বেড়ে চলছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ভিডিও শেয়ারিং ও সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের মালিক প্রতিষ্ঠান গুগল। বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সাল থেকে গুগলের কাছে কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
গুগলের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কনটেন্ট সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০৮টি অনুরোধ পেয়েছে তারা। যেখানে ৩ হাজার ৮৯০ ধরনের ইস্যু ছিল।
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঘৃণা ছড়ানো, ধর্মীয় উসকানি, অ্যাডাল্ট কনটেন্ট, মানহানি, অজানা কারণ, কপিরাইট লঙ্ঘন ইস্যুতে ইউটিউব থেকে কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ জানায় সরকার।
মানহানি ইস্যুতে তথ্য চাওয়া শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। ২০১৬ সাল থেকে যুক্ত হয় সরকারের সমালোচনা ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে এ সময় ইউটিউবের পাশাপাশি গুগলের মালিকানাধীন জিমেইলও যুক্ত হয়। তবে সে সময় কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ কম ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় তা বাড়তে থাকে।
২০১৮ সালে সরকারের ‘সমালোচনা’-সংক্রান্ত দুটি ইউটিউব কনটেন্ট নামানোর অনুরোধ করা হয়। ২০১৯ সালে একটি। ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে একটি, পরের ছয় মাসে ৭৩টি। ২০২১ সালে ১৮০টি ইউটিউব কনটেন্ট নামানোর অনুরোধ জানানো হয়।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের ‘সমালোচনা’-সংক্রান্ত ১৭৪টি ইউটিউব কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করা হয়, যা সর্বোচ্চসংখ্যক। এ ছাড়া একই সময়ে ‘মানহানি’-সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি ৪৪৪টি কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করা হয়।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের অনুরোধে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ কনটেন্টের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি গুগল। এ ছাড়া ৪০ শতাংশের বেশি কনটেন্টের ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট তথ্য পায়নি।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ফেসবুকের কাছ থেকে সরকার ১ হাজার ১৭১টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছিল। সরকার ফেসবুকের কাছে মোট ৬৫৯টি অনুরোধ করে। যার মধ্যে ৬১০টি ছিল আইনি প্রক্রিয়ায়, ৪৯টি জরুরি-ভিত্তিতে। সরকারের অনুরোধে ফেসবুক ৬৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করে। গত আট বছরের মধ্যে সরকার এ বছরই ফেসবুকের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি তথ্য চেয়েছে।
মার্কিন অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে থাকে। সংস্থাটির চলতি বছরের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্কোর ৪৩।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা কম। সরকার, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অনলাইন সমালোচনাকারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নজরদারি সরঞ্জাম কেনার পেছনে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকার রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় না। বর্তমানে মানুষের মতপ্রকাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাহন ডিজিটাল মাধ্যম। কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমের গণতান্ত্রিক ব্যবহার থেকে বাংলাদেশ এখনো দূরে। বাংলাদেশের বাজার বড় হওয়ায় সরকারের এ ধরনের অনুরোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর আপসের আশঙ্কা থেকে যায়।
আরও পড়ুন:
১২ ডিসেম্বর ২০২২
সূত্র: প্রথম আলো