6.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর

সিরিয়ার শরনার্থী শিশু জার্মানির সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু

যুদ্ধের ভয়াবহতায় নিজের দেশ সিরিয়া ছেড়ে বাবার সঙ্গে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছিল ছোট্ট শিশু হুসেইন বেসু। এখন তার বয়স ১১। এ মাসের শেষ দিকে ক্রোয়েশিয়া যাচ্ছে হুসেইন। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক আসরে জার্মানির সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে এক জার্মান সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়।

খবরে প্রকাশ জার্মানির সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার দৌড়েও এগিয়ে আছে এই শরণার্থী শিশুটি। ২০১৬ সালে সিরিয়া ছেড়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেয় তার পরিবার। জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লিপস্টাড হয় তাদের নতুন ঠিকানা। তখন তার বয়স চার। ওই সময় ছোট্ট হুসেইনের হাতে দাবার বোর্ড তুলে দেন বাবা মুস্তাফা বেসু। এমনকি ছোটোদের একটি দাবা ক্লাবে তাকে ভর্তিও করিয়ে দেন।

ক্লাবে যখন ছোট্ট হুসেইন যাওয়া আসা করছিলেন, তখনও জার্মান ভাষার ওপর তার দখল তৈরি হয়নি। তাই কোচেরা কী বলতেন, সেটা ঠিকমতো বুঝতে পারতেন না। কিন্তু দেখা যেত, ক্লাবে আসা অন্য খুদে দাবাড়ুদের খুব সহজেই হারিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তার প্রতিভা দেখে কোচ বলেছিলেন, তাকে জাতীয় পর্যায়ের একটি দাবা ক্লাবে যোগ দিতে। জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে থাকার বিষয়টি অবশ্য বেশ পছন্দ করেন তার কোচেরাও।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্ম হুসেইনের। বেড়ে ওঠার সময় বাবা আর দাদাকে নিয়ম করে দাবা খেলতে দেখেছেন। তখন দাবা বোঝার বয়স না হলেও, এ খেলার প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। ২০১৬ সালে যখন তার বয়স চার, তখনই দাবা খেলা শেখাতে বাবার কাছে বায়না শুরু করেন।

দাবার নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেয়ার পর থেকে, সন্তানের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হতেন বাবা। তার বাবা মুস্তফা বেসু বলেন, “সে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিত। বলে দিত, জিততে হলে কিভাবে খেলতে হবে।”

মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই নিজের বাবাকে হারিয়ে দেয় হুসেইন। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ভেল্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুস্তফা বলেন, “আমি কিন্তু তাকে কিছুই শিখিয়ে দিইনি।”

 

 

 

 

 

২০১৬ সালে হুসেইনের পরিবার সৌদি আরব ছাড়ার পরিকল্পনা নেয় । সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে শুরু হয় রাজনৈতিক মেরুকরণ। ফলে যুদ্ধের মধ্যে তাদের সিরিয়া ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে শঙ্কা জাগে মনে। বিভিন্ন পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত জার্মানিতে এসে থিতু হয় মুস্তফার পরিবার।

বর্তমানে ১১ বছরের হুসেইন ক্রোয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মিটরোপা কাপে অংশ নেবেন জার্মানির জাতীয় দলের একজন হয়ে। ১৪৬ বছরের ইতিহাসে জার্মানির জাতীয় দলের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হুসেইন। তার চাল এবং খেলার ধরনকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন জার্মানির জাতীয় যুব দাবা প্রশিক্ষক ব্রেন্ড ফয়েলকের।

তীক্ষ্ণ এই শিশু দাবাড়ু এখনও পূর্ণ জার্মান নাগরিক না হলেও, সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবেই আন্তর্জাতিক আসরে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে হুসেইনকে বেছে নিয়েছে জার্মানির জাতীয় যুব প্রশিক্ষক ফয়েলকের। সেখানে বড়দের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে তাকে। ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে হুসেইন অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করবে বলে মনে করেন তিনি।

বয়সের পার্থক্য নিয়ে অতো চিন্তিত নন হুসেইন। তিনি বলেন, “যদি আমি জিতে যাই, তাহলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবো। যদি আমি হেরে যাই, তাহলে পরেরবার জয়ের চেষ্টা করব।”

বয়স ১৪ পেরোনোর আগেই গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে হুসেইন। আর এখনো পর্যন্ত এই মাইলফলকটি শুধু একজন জার্মানই অর্জন করতে পেরেছেন।

আরো পড়ুন

হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার

অনলাইন ডেস্ক

সহসাই খুলছে না ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

নিউজ ডেস্ক

No Human is Illegal | January 19