TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

হোম অফিসের স্বীকারোক্তিঃ ফেসিয়াল রিকগনিশনে এশিয়ান–কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য

যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অভিযোগ এবার সরকারি স্বীকৃতি পেল। হোম অফিস প্রকাশিত সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গেছে—ব্রিটিশ পুলিশ যে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম প্রতিদিন শত শতবার ব্যবহার করছে, সেটি জাতিগত সংখ্যালঘু ও নারীদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হারে ভুল ফলাফল দিচ্ছে।

সরকারি গবেষণা অনুসারে, এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের ভুলভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি। একইভাবে নারীদের ক্ষেত্রে ভুল শনাক্তের হার পুরুষদের তুলনায় দুই গুণ বেশি পাওয়া গেছে। বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে ভুল শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রযুক্তিটি এশিয়ানদের ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে শনাক্ত করলেও ভুল শনাক্তের হার ছিল অনেক বেশি—প্রায় ৪ শতাংশ। কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে একই হার আরও বেড়ে ৫.৫ শতাংশে পৌঁছায়। তুলনামূলকভাবে শ্বেতাঙ্গদের ভুল শনাক্তের হার মাত্র ০.০৪ শতাংশ—অর্থাৎ প্রায় শূন্যের কোঠায়।

গবেষণায় বয়সভেদেও উল্লেখযোগ্য বৈষম্য দেখা গেছে। ২০–এর দশকের তরুণ–তরুণীদের ভুলভাবে সন্দেহভাজন চিহ্নিত হওয়ার হার ছিল ৫ শতাংশের বেশি, যেখানে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে তা নেমে আসে ০.১ শতাংশে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তির ব্যবহৃত ডেটাসেট ও প্রশিক্ষণগত সীমাবদ্ধতা এই বৈষম্যের মূল কারণ।

এদিকে সরকার মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে অপরাধ দমনে “ডিএনএ–এর পর সবচেয়ে বড় অগ্রগতি” বলে অভিহিত করছে। মাসে ২৫,০০০–এর বেশি রেট্রোস্পেকটিভ (পেছন থেকে চেহারা মিলিয়ে দেখা) সার্চ করা হচ্ছে, এবং ইংল্যান্ড–ওয়েলসের ১৩টি পুলিশ বাহিনী বর্তমানে লাইভ ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করছে। এই দ্রুত সম্প্রসারণ নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো।

অ্যাসোসিয়েশন অব পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম কমিশনার্স বলেছে, প্রযুক্তির মধ্যে “গুরুতর অন্তর্নিহিত পক্ষপাত” রয়েছে এবং যথাযথ নিরাপত্তাবিধি ছাড়া এটি পুলিশিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। তাদের মতে, এতদিন কোনো বড় ধরনের ক্ষতি না হওয়া “ডিজাইনের কারণে নয়, ভাগ্যের কারণে”।

মানবাধিকার সংগঠন লিবার্টি জানিয়েছে, গত সাত বছরে এই প্রযুক্তির ভুল ফলাফলের কারণে হাজার হাজার এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি অযথা সন্দেহবাজনে পরিণত হয়েছেন।

তবে হোম অফিস দাবি করেছে, তারা ইতিমধ্যে একটি নতুন পক্ষপাতমুক্ত অ্যালগরিদম তৈরি করেছে, যা পরীক্ষার পর আগামী বছর থেকে চালু করা হবে। পাশাপাশি পুলিশকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—মুখ শনাক্তকরণের ফলাফল কখনোই একক ভিত্তিতে গ্রেফতার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করা যাবে না, বরং প্রতিটি ধাপে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের মানবিক যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারি স্বীকৃতির পর প্রযুক্তিটি নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হলে এটি অপরাধ দমনের হাতিয়ার হওয়ার বদলে নতুন ধরনের বৈষম্য ও অন্যায়ের উৎস হয়ে উঠতে পারে।

সূত্রঃ ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

এম.কে

আরো পড়ুন

হাসপাতালের টয়েলেটে সন্তান জন্ম দিলেন লন্ডনের শিক্ষার্থী

একাউন্টিং ও ট্যাক্স সলিউশনের উপর নতুন অনুষ্ঠান TV3 বাংলাতে

নিউজ ডেস্ক

আইন ভঙ্গের দায়ে যুক্তরাজ্যে জরিমানার মুখোমুখি টিউলিপ সিদ্দিকি